Nadia

Death in road accident: দেহ ফিরল দুর্ঘটনায় মৃত দুই শিল্পীর

বুধবার সকালে প্রশাসনের উদ্যোগে বাড়ি ফিরল বিশ্বনাথ দাস (৪৫) এবং রানাঘাট থানার পায়রাডাঙার বাসিন্দা কৃষ্ণ বিশ্বাসের (৩০) মৃতদেহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাকদহ শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২২ ০৬:০০
Share:

বিশ্বনাথ দাস নিজস্ব চিত্র।

দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ের কথা। জেলা জুড়ে তখন করোনা-আতঙ্ক। তখন করোনায় কারও মৃত্যু হলে ঘরেই পড়ে থাকছিল মৃতদেহ। পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধুরা কেউ সৎকারের কাজে এগিয়ে আসছিলেন না ভয়ে।

Advertisement

সেই সময়ে নিজের প্রাণের তোয়াক্কা না করে এগিয়ে এসেছিলেন বিশ্বনাথ দাস। আরও কয়েক জন করোনা যোদ্ধার সঙ্গে মিলে বিশ্বনাথ অচেনা মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে গিয়ে সৎকার করিয়েছেন। যখন করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে ভয়ে কেউ যেতে চাইতেন না, সেই সময়ে বিশ্বনাথ পিঠে মেশিন নিয়ে পাড়ায়-পাড়ায় আক্রান্তের বাড়ি পৌঁছে গিয়ে নিজ উদ্যোগে জীবাণুনাশক স্প্রে করেছিলেন। করোনা রোগীদের বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্যদ্রব্য, প্রয়োজনীয় ওষুধ, অক্সিজেন।

বুধবার সকালে সেই সদা- পরোপকারী বিশ্বনাথের নিথর দেহ ফিরে এল তাঁর চাকদহের সলুয়া এলাকার বাড়িতে। যিনি ছিলেন একাধারে করোনা কালের স্বেচ্ছাসেবক তথা লোকশিল্পী।

Advertisement

তাঁর কফিনবন্দি দেহ দেখে এ দিন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন কেউ কেউ। কেউ আবার নিঃশব্দে জামার হাতায় চোখ মুখে নিয়েছেন। তবে বিশ্বনাথের মৃত্যুটা মেনে নিতে পারেননি কেউই। শোকের আবহের মধ্যেই দিনভর চর্চা চলেছে মানুষটির অন্যের বিপদে এক মুহূর্ত না ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়ার বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে। যেমন, চাকদহ করোনা ভল্যান্টিয়ার্স কর্ণধার সৌমিত্র ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘করোনার বাড়বাড়ন্তের সেই সময়টায় কেউ এগিয়ে আসেননি। আমরা কয়েক জন লড়াই করে গিয়েছি। বিশ্বনাথ তাঁদের মধ্যে এক জন। আজ সেই দিনগুলোর কথা খুব বেশি করে মনে পড়ছে। এক জন নির্ভীক সৈন্যকে হারালাম।’’

বুধবার সকালে প্রশাসনের উদ্যোগে বাড়ি ফিরল বিশ্বনাথ দাস (৪৫) এবং রানাঘাট থানার পায়রাডাঙার বাসিন্দা কৃষ্ণ বিশ্বাসের (৩০) মৃতদেহ। গত সোমবার সকালে অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার সময়ে শিলিগুড়ির কাছে জাটিয়াকালিতে পথ দুর্ঘটনায় তাঁদের দু’জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় গাড়ির বাকি ছয় জন যাত্রীও আহত হয়েছেন।

বুধবার সকাল থেকেই বিশ্বনাথের দেহ আসার খবরে বাড়ির সামনে ভিড় জমতে শুরু করে। মৃতদেহ এলে কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার, আত্মীয়স্বজন। উপস্থিত ছিলেন চাকদহ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান দেবব্রত নাগ। তিনি বলেন, ‘‘উনি এলাকায় ভাল ছেলে বলে পরিচিত ছিলেন। লোকশিল্পী ছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করেছেন।’’

বিশ্বনাথের বাবা-মা আগেই মারা গিয়েছেন। বছর সাতেক ধরে চাকদহ পুরসভার সিআইসি সদস্য মৌমিতা ভট্টাচার্যের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়িতেই থাকতেন তিনি। এ দিন ওই এলাকায়ও লোকশিল্পীর মৃতদেহ নিয়ে আসা হয়েছিল। মৌমিতা বলেন, ‘‘মৃতদেহ আনার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম।’’ পরে চাকদহ শ্মশানে দু’জনের দাহকার্য সম্পন্ন হয়।

চাকদহের বিডিও অতনু ঘোষ বলেন, ‘‘ওখানকার বিডিও সঙ্গে আলোচনা করে সরকারি নিয়ম মেনেই মৃতদেহ দু’টি নিয়ে এসে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement