প্রতীকী ছবি।
রেললাইনের উপর বসেছিলেন দুই বন্ধু। মাঝেমধ্যে গল্পও করছিলেন বটে। কিন্তু মন ছিল মোবাইল ফোনের দিকে। কানে গোঁজা ছিল হেডফোন। মোবাইল গেমের প্রতি চরম আসক্তি দুই যুবকের। সেই আসক্তির জেরেই মৃত্যু হল তাঁদের। কানে হেডফোন গুঁজে লাইনে বসে গেম খেলার সময় ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হল দুই যুবকের। শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ নদিয়ার কৃষ্ণনগর সংলগ্ন মুড়াগাছা রেলগেট এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত দুই যুবকের নাম সাব্বির শেখ (১৯) এবং শাহিন শেখ (২১)। মুড়াগাছা এলাকার বাসিন্দা তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ শিয়ালদহ-লালগোলা লাইনের উপর দিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে যাচ্ছিল আপ ধনধান্য এক্সপ্রেস। সেই সময় মুড়াগাছা রেলস্টেশনের পাশে রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় লাইনের উপরে কানে হেডফোন গুঁজে বসে মোবাইল ফোনে গেম খেলছিলেন সাব্বির এবং শাহিন। কানে হেডফোন থাকার কারণে ট্রেনের হুইসেলও কানে যায়নি তাঁদের। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ঘটনাটি লক্ষ করে আশপাশে থাকা লোকজনও সাব্বির এবং শাহিনকে চিৎকার করে ডাকাডাকি করতে থাকেন। কিন্তু তাঁদের চিৎকারও শুনতে পাননি ওই দুই যুবক।
রেল সূত্রে খবর, দুই যুবককে রেললাইনের উপর বসে থাকতে দেখে ট্রেনের চালককে সতর্ক করেছিলেন ওই ট্রেনের গার্ড। ট্রেন দ্রুত গতিতে থাকায় এত স্বল্প দূরত্বে কোনও ভাবেই ট্রেন থামানো সম্ভব ছিল না বলে রেল সূত্রের দাবি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ট্রেনের ধাক্কায় দেহ কাটা পড়ে সাব্বির এবং শাহিনের। স্থানীয়েরা তড়িঘড়ি করে দুই যুবককে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনা প্রসঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শী সুভাষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘লাইনের দু’পারে থাকা অনেক মানুষ চিৎকার করেছিলেন। কিন্তু ওঁরা দু’জন মোবাইল গেমে এতটাই মজেছিলেন যে, শুনতে পাননি। কানে হেডফোনও ছিল। অন্যদের চিৎকার শুনতে না পেয়ে দুর্ঘটনা ঘটে গেল। চোখের সামনে দু’জনের দেহ ছিটকে পড়ে যেতে দেখলাম।”
মোবাইল ব্যবহারের কারণে ইদানীং ট্রেনের ধাক্কায় বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। কখনও কথা বলতে বলতে, আবার কখনও হেডফোন লাগিয়ে ট্রেনের আওয়াজ শুনতে না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনা অনবরত বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। রেল এবং প্রশাসনের তরফে বার বার সাধারণ মানুষকে সতর্কও করা হলেও যে পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হচ্ছে না, নদিয়ার এই ট্রেন দুর্ঘটনাই তার প্রমাণ।