থমকে: ফরাক্কায়। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
কাজ শুরুর মুখেই ছিল কপালে ভাঁজ। ছিল প্রশ্ন, নির্বিঘ্ন পারাপারের প্রশনে যতটা ভরসা দেওয়া হচ্ছে, আদতে তা হবে তো! সেই সংশয়টা ফিরে এসেছে কাজ শুরুর দিন ছয়েকের মধ্যেই। ফরাক্কাগামী হাজার হাজার লরি থমকে রয়েছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক বরাবর। সেতুর উপরে কাজ হচ্ছে, ধুলোও উড়ছে তবে যান নড়ছে না।
ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের ঢিলেঢালা কাজের গতির ফলেই রাতে সেতুর উপরে আছড়ে পড়া লরির ঝাঁক সামাল দিতে নাভিশ্বাস উঠেছে স্থানীয় পুলিশের। এক ফালি রাস্তা ধরে লরি পারাপার করছে বটে তবে তা সংখ্যায় নগন্য।
সাগরদিঘির মোরগ্রাম থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অন্তত ১৪টি জায়গায় সার বেঁধে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় হাজার পাঁচেক লরি। ফরাক্কা থেকে পাকুড় ও বারহারোয়া, রাজ্য সড়কে পাথর বোঝাই লরি দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় দেড় হাজার। সন্ধ্যে ৫টা নাগাদ সবাই এগোতে চাইছে ফরাক্কা সেতু অভিমুখে। কেউ পারছে, কেউ যাচ্ছে থমকে। কখনও চার দিন কখনও বা পাঁচ দিন। পুলিশ বলছে, ‘‘দেখছেনই তো অবস্থা।’’ আর নিরুত্তাপ গলায় ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ বলছেন, ‘‘কি করা যাবে, কাজ তো করতেই হবে।’’
জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঙুল ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের দিকে। তিনি বলছেন, “কথা ছিল বেশি সংখ্যায় শ্রমিক ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ শেষ করা হবে। কিন্তু কোথায় কি? কোনও গতিই নেই কাজের। যাদের পুকুরে সাঁতার কাটার ক্ষমতা নেই, তাদের দেওয়া হয়েছে সমুদ্র পেরোবার দায়িত্ব। আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফল ভুগতে হচ্ছে লরি চালকদের।”
বুধবার দুপুরে ফরাক্কায় গিয়ে দেখা গেল, ব্যারেজের উপর ১১২টি গেটের মধ্যে জনা কুড়ি শ্রমিক কাজ করছেন ১০ ও ১১ নম্বর লক গেটের পাশে। ৬টি ড্রিল মেসিন ও গোটা কয়েক শাবল নিয়ে রাস্তার বিটুমিন ও কংক্রিট ভাঙার কাজ চলেছে। ছোট ছোট গাড়ি পেরোচ্ছে পাশের লেন ধরে। ৬ দিনে মাত্র ১১টি গেটের এক দিকের রাস্তা উপরে ফেলা গিয়েছে। ২২৪৫মিটার দীর্ঘ ফরাক্কা সেতুর। এই হিসেবে কাজ চললে শুধু রাস্তা ভাঙতেই তিন থেকে সাড়ে তিন মাস সময় লাগবে। অথচ লক্ষ্য ছিল প্রথম পর্বের কাজ শেষ হবে ৩৫ দিনে। সেতুর উপর দাঁড়িয়ে সিআইএসএফ জওয়ান এনজি ডুপকা। ধুলোয় মাথা-মুখ হারিয়ে গিয়েছে তাঁর। বলছেন, “উপায় কি? মুখ বুজে এই দুঃসহ অবস্থায় যানজট রুখছি।”
ফরাক্কায় আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষ বলছেন, “ফরাক্কার মত আন্তর্জাতিক সেতুর সড়ক সংস্কারে শাবল ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে কাজের গতি যা হওয়ার তাই হচ্ছে। ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষকে বার বার বলা হয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রাদি এনে দ্রুত কাজ করুন। দরকার হলে যারা জাতীয় সড়ক তৈরি করছে তাদের সাহায্য নিন। কিন্তু কোনো হেলদোল নেই।’’
ফরাক্কার জেনারেল ম্যানেজার শৈবাল ঘোষ বলছেন, “এই তো সবে ছ’দিন হল কাজ শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে কাজের গতি বাড়বে। আর ৩৫ দিন সময় দেওয়াটা একটা লক্ষ্য ধরতে হয় তাই। কাজ চলছে। যতদিন লাগবে সে সময় তো দিতেই হবে।”
ফরাক্কা ব্যারাজের কাজের শম্বুক গতিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন লরির চালকেরা। রামশঙ্কর লরি নিয়ে বেরিয়েছেন আসানসোল থেকে। যাবেন গুয়াহাটি। বলছেন, “মোরগ্রাম থেকে ফরাক্কা আসতে তিন দিন পেরিয়ে গিয়েছে। আরও ১৬ কিলোমিটার পথ বুধবার রাতে পার হতে পারব কিনা জানি না।”