রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত চূর্ণী নদীকে কেন্দ্র করে পর্যটনের চিন্তা-ভাবনা করেছিল রানাঘাট পুরসভা। সরকারি ভাবে নদীতে জলযান চালানোর ছাড়পত্রও মেলে। অথচ নদীর উপর আনুলিয়া-মাজদিয়া সেতুর ২৪টি স্তম্ভ সেই জলযান চলাচলে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজ্য জলপথ পরিবহণ দফতর থেকে জলযান মেলার পরেও ভাগীরথী , চূর্ণী নদী হয়ে রানাঘাট পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি সেই যান। বিকল্প হিসাবে এবার তাই ছোট জলযান 'শিকারা' চালাতে উদ্যোগী হয়েছে রানাঘাট পুরসভা।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিমত বছর দুয়েক আগে জলপথ পরিবহণের জন্য লঞ্চ পরিষেবা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য রাজ্যস্তরে আবেদনও জানায় পুরসভা। একটি জলযান অনুমোদন করে পরিবহণ দফতর। অথচ সেতুর স্তম্ভের কারণে সমস্ত ভাবনাই এখন জলে। যদিও শহরবাসীর চাহিদার কথা মাথায় রেখে বড় জলযানের পরিবর্তে ছোট জলযান চালানোর কথা পুরসভার পক্ষ থেকে নতুন করে পরিবহণ দফতরকে জানানো হয়েছে। পরিবহণ দফতরের সবুজ সংকেত পেলেই চূর্ণী নদীতে ঘুরে বেড়াবে 'শিকারা'। এছাড়াও ছোট হাউসবোটের কথাও পুরসভার তরফে পরিবহণ দফতরকে জানানো হয়েছে।
কৃষ্ণগঞ্জের পাবাখালি থেকে মাথাভাঙা পর্যন্ত নদী দু’ভাগে ভাগ হয়ে একটি চূর্ণী ও অন্যটি ইছামতী নামে বয়ে গিয়েছে। ‘হান্টারস স্ট্যাটিস্টিকাল অ্যাকাউন্টস অফ বাংলা ডিস্ট্রিক্ট অফ নদিয়া অ্যান্ড যশোর’ থেকে জানা গিয়েছে, ১৮৪৭ সালে এই নদীপথে রাজস্ব বাবদ আদায় হয়েছিল এক লক্ষ ৮০ হাজার ২৫০ টাকা। বর্তমানে নদীতে বেশ কয়েকটি ফেরিঘাট থাকলেও তা শুধুমাত্র পারাপারের কাজে ব্যবহৃত হয়। নদীপথে রানাঘাট থেকে চূর্ণীর মোহনা পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। যাত্রাপথে নদীর দুই পাড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি উদ্যান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম সঙ্গীত শিক্ষাগুরু বিষ্ণু চক্রবর্তীর স্মৃতিবিজড়িত গ্রাম কায়েতপাড়া, শ্রীরামকৃষ্ণের স্মৃতিবিজড়িত কলাইঘাটা গ্রাম। রানাঘাট পুরসভার তরফে জলযান চালু হলে শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের অবকাশ পার্ক থেকে পায়রাডাঙ্গায় ভাগীরথীর মোহনা পর্যন্ত দর্শনীয় স্থানগুলি ভ্রমণের সুযোগ মিলবে। অনেকেই মনে করছেন, কাশ্মীরের ডাল লেকে শিকারা বা হাউসবোটে সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা এবার চূর্ণী নদীতে মিলবে। রানাঘাটের পুরপ্রধান কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পর্যটন নিয়ে যাবতীয় পরিকল্পনা থাকলেও মাজদিয়া সেতু এখন বাধা হয়ে আছে। ওই সেতুর স্তম্ভগুলির মধ্যেকার দূরত্ব কম হওয়ায় বড় জলযানের অনুমোদনের পরেও চালানো সম্ভব হয়নি। যে কারণে এবার ছোট জলযান বা শিকারার কথা সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হয়েছে।"