ফাইল চিত্র।
চারপাশটা ভাল করে দেখে নিয়ে দোকানির কানের কাছে ফিসফিস করে যুবক, “ক’টা শব্দবাজি হবে দাদা? দাম বেশি দিতে রাজি আছি।”
দোকানি একটু থতমত। তার পরে সটান জবাব, “না, ভাই। ক’টা টাকা লাভ করতে গিয়ে জেল খাটার ইচ্ছে আমার নেই।” যুবক হতাশ হয়ে স্টার্ট দেয় মোটরবাইকে।
চায়ের দোকানের সঙ্গেই এ বার বাজির দোকান খুলে বসেছেন অরূপ অধিকারী। তাঁর কথায়, “পুলিশ যত কড়াকড়ি করছে, ততই যেন শব্দবাজি পোড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে ছেলেগুলো। কী আনন্দ, কে জানে!”
এই অভিজ্ঞতা তাঁর একার নয়। নদিয়ার করিমপুর থেকে শুরু করে কল্যাণী, কালীগঞ্জ থেকে শুরু করে ধানতলা— সর্বত্র একই চিত্র। বিভিন্ন থানায় একাধিক বাজি বিক্রেতা ধরা পড়েছে। উদ্ধার হয়েছে শ’য়ে শ’য়ে বাজির প্যাকেট। দিন কয়েক আগে শব্দবাজি পোড়ানোর অপরাধে পুলিশ দুই যুবককে গ্রেফতারও করেছে। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি।
পুলিশের ধড়পাকড় যেমন আছে, তেমনই আছে নিষিদ্ধ বাজির প্রতি কমবয়সীদের আকর্ষণ। তারই টানে দোকানে দোকানে হানা দিচ্ছে তারা। পিছিয়ে নেই মেয়েরাও। আদালতের নির্দেশ, প্রশাসনের কড়া অবস্থান, প্রচার, কিছুই তাদের বিরত করতে পারছে না। বছর কয়েক আগেও গাংনাপুরে বাজি কারখানায় লুকিয়ে শব্দবাজি তৈরি হত। সে সব এখন বন্ধ বলে দাবি মালিকদের।
মঙ্গলবারও ১৪০ কেজি শব্দবাজি মজুত রাখার অভিযোগে এক জনকে গ্রেফতার করেছে শান্তিপুরের পুলিশ। রাতে ধানতলা থানার পুলিশ ২৮ প্যাকেট শব্দবাজি ধরেছে। গ্রেফতার হয়েছে এক ব্যবসায়ী। একই ভাবে কোতোয়ালি, ধুবুলিয়া, কালীগঞ্জের পুলিশও প্রচুর শব্দবাজি ধরেছে। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, শব্দবাজির এখনও কী চাহিদা! চাহিদা না থাকলে এত ধরপাকড়ের মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে কেউ বাজি বিক্রি করত না।” ছবিটা কিছুটা হলেও ভিন্ন পড়শি মুর্শিদাবাদে। গত দু’দিনে জঙ্গিপুর, রঘুনাথগঞ্জ, কান্দিতে বাজির দোকান কমে গিয়েছে অনেকটাই। প্রায় একই অবস্থা বহরমপুরেও। ব্যবসায়ীদের দাবি, হঠাৎ করেই বাজির চাহিদা কমে গিয়েছে। অনেকের মতেই, শব্দবাজি নিয়ে পুলিশ কড়াকড়ি এর একটা কারণ হয়ে থাকতে পারে। বিশেষ করে কমবয়সীদের ক্ষেত্রে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ডোমকল, হরিহরপাড়া, জলঙ্গি, বেলডাঙায় কোনও বার বাজি বিক্রি হয় না। এ বার সেই চিত্রের বদল ঘটেনি। শব্দবাজির চোরাগোপ্তা খোঁজে অবশ্য খামতি নেই।
রানাঘাট বা কল্যাণীতে এলাকায় যে চকোলেট বোমের শব্দ একেবারে শোনা যাচ্ছে না, তা নয়। তবে আগের বারের চেয়ে কম। মূলত নৌকায় ও রেলে কলকাতা থেকে জেলায় ওই সব বাজি ঢুকেছে বলে নদিয়া জেলা পুলিশের দাবি। বাজি ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশের মতে, অনেকেই সচেতন হয়েছেন। অনেকে পুলিশের ভয়ে শব্দবাজি পোড়াতে পারছেন না। কমবয়সীদের একটা বড় অংশ এখনও ঝুঁকি নিচ্ছে, তাতেই তাদের আনন্দ। তবে অন্য বছর কালীপুজোর দু’দিন আগে থেকে শব্দবাজি পাড়া কাঁপাতে শুরু করত, এ বার এখনও পর্যন্ত তেমনটা হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে। স্বস্তিতে প্রশাসনও।
বৃহস্পতিবার রাতে সেই স্বস্তি কতটা বজায় থাকে, সেটাই দেখার।