সীমান্তে ফের শুরু হয়েছে গরু পাচার। আর তারই জেরে অশান্ত হয়ে উঠেছে সীমান্তঘেঁষা জলঙ্গি।
শনিবার রাতে জলঙ্গির সরকারপাড়ায় পাচারকে কেন্দ্র করে গ্রামের দু’পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোল বাধে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ এলে ইটের আঘাতে জখম হন জলঙ্গি থানার মীর জালালউদ্দিন নামে এক এএসআই। ওই গণ্ডগোলে জখম হয়েছেন এক অন্তঃসত্ত্বা। দু’জনেই হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। বেশ কিছু বাড়িতে ভাঙচুর ও লুঠ চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ দু’পক্ষেরই। জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “শনিবার রাতে গ্রামের দু’পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোলের জেরে এক পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন। ওই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি ২০ জন অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে। গ্রামে পুলিশি টহল শুরু হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গরু পাচারকে কেন্দ্র করে এলাকায় গোলমাল লেগেই রয়েছে। তাছাড়া রাতের অন্ধকারে গরু পাচারের সময় গরুর পায়ের চাপে নষ্ট হচ্ছে খেতের ফসল। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, আজ থেকে বছর কয়েক আগেও এই এলাকায় পাচার ছিল রোজনামচা। পরে সেই প্রবণতা অনেকটা কমেও যাওয়ায় এলাকায় শান্তি ফিরেছিল। কিন্তু সম্প্রতি ফের শুরু হয়েছে গরু পাচার। আর তার জেরে এলাকায় গোলমাল লেগেই রয়েছে। সম্প্রতি বিএসএফের সাহায্য নিয়ে পাচারের অভিযোগে এই এলাকার চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে শনিবার রাতে গোলমাল শুরু করে। সেই গোলমালে জড়িয়ে পরে গ্রামেরই দু’টো পক্ষ।
ইতিমধ্যে এই পাচার নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের প্রশ্রয়েই ফের পাচার শুরু হয়েছে। আর পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যে কিছু লোক বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় তৃণমূলের লোকজন তাদের মারধর করেছে। অভিযোগ অস্বীকার করে, তৃণমূলের দাবি, মিথ্যে অভিযোগ করে এলাকায় শান্তির পরিবেশ নষ্ট করতে চাইছে বিজেপি। বিজেপির কিছু লোকজন তাদের কর্মী সমর্থকদের মারধর করেছে।
রবিবার সকালে সরকারপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল গোটা গ্রাম থমথমে। গ্রামের বেশিরভাগ পুরুষ বাড়িছাড়া। চোঁয়াপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সিপিএম সদস্য রুনা লায়লার অভিযোগ, “গত প্রায় একমাস ধরে পাচারকারীদের অত্যাচারে মাঠের ফসল নষ্ট হচ্ছে। তৃণমূলের লোকজনই এই পাচারের সঙ্গে জড়িত। সেই কারণে কোথাও অভিযোগ জানিয়েও কাজ না হওয়ায় পাচার রুখতে আমরা বেশ কয়েকজন সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছি। আর তারই বদলা নিতে আমাদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে তৃণমূল।” মহিলাদের অভিযোগ, বাড়িতে পুরুষদের না পেয়ে তাঁদের উপরেও নির্যাতন করেছে তৃণমূলের লোকজন। আর হামলাকারীরা শাসক দলের লোক হওয়ায় পুলিশ সব জেনেও ওদের মদত দিচ্ছে।