বৃত্তের বাইরে অজয়-শঙ্কর

ম্যাচ জেতা সহজ হবে?

অজয় দে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন অনেক দিন হয়ে গেল। তেমন সুবিধে করতে পারেননি। গত বিধানসভা ভোটে তাঁকে সিপিএমের বদান্যতায় নিজের তল্লাটেই পরাজিত করেছিলেন কংগ্রেসের অরিন্দম ভট্টাচার্য। কিন্তু তাতে কি তাঁর পায়ের নীচের মাটি একেবারে সরে গিয়েছে? অনেকেই কিন্তু বলছেন, তা হয়নি।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৮ ০৯:১০
Share:

প্রতীকী ছবি।

নিজের বিশ্বস্ত চারমূর্তিতে ভরসা রাখতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু পরে দলে আসা তুলনায় নতুন নেতাদের এই বৃত্তের বাইরে রেখে কি লোকসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার করা যাবে? বিশেষ করে দলের অন্দরে নতুন-পুরনো দ্বন্দ্ব যখন পঞ্চায়েত ভোটে ডুবিয়েছে দলকে? দলের ভিতরেই উঠছে এই প্রশ্ন।

Advertisement

অজয় দে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন অনেক দিন হয়ে গেল। তেমন সুবিধে করতে পারেননি। গত বিধানসভা ভোটে তাঁকে সিপিএমের বদান্যতায় নিজের তল্লাটেই পরাজিত করেছিলেন কংগ্রেসের অরিন্দম ভট্টাচার্য। কিন্তু তাতে কি তাঁর পায়ের নীচের মাটি একেবারে সরে গিয়েছে? অনেকেই কিন্তু বলছেন, তা হয়নি।

পঞ্চায়েত ভোটে দল অজয় দে-কে বিশেষ দায়িত্ব দেয় নি। টিকিট বণ্টনের দায়িত্ব ছিল মূলত বিধায়কের উপরে। ফলে অজয়-ঘনিষ্ঠ অনেক সদস্য, এমনকি একাধিক প্রধানও টিকিট পাননি। তাঁরা অনেকেই নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছেন। সেই সংখ্যাটা নেহাত কম না। দলেরই অনেকের দাবি, এর পিছনে আছে অজয় দে-র অদৃশ্য হাত।

Advertisement

সেই সঙ্গে, বরং পরে তৃণমূলে ঢুকে অরিন্দম যে সব কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তা-ই ফের অক্সিজেন জোগাচ্ছে একদা প্রায় কোণঠাসা হয়ে যাওয়া বর্ষীয়ান নেতাকে। সিপিএম ও অন্য বামপন্থী দল থেকে বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদের নিয়ে নিজস্ব বৃত্ত তৈরি করেছেন বহিরাগত অরিন্দম। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটে তাদের উপরে ভরসা করে ল্যাজে-গোবরে অবস্থা হয়েছে তার।

একাধিক বুথে জনতা পুড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূলের বাহিনীর বাইক। বুথে ঢোকায় পিটিয়ে মারা হয়েছে তাঁরই এক অনুগামীকে। গণধর্ষণ এবং বিজেপি কর্মী খুনের মতো একের পর এক ঘটনাতেও নাম জড়িয়েছে তাঁর অনুগামীদের। দলের মধ্যেও অনেকে তাঁর উপরে বিরক্ত। কিন্তু তার পরেও কেন তাঁর ডানা ছেঁটে অজয়কে বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে দলেই।

এই আলোচনার সিংহ ভাগ জুড়ে থাকছে জেলার দীর্ঘদিনের হেভিওয়েট নেতা শঙ্কর সিংহের নামও। বামের সঙ্গে জোট করে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অন্যতম কার্যকরী সভাপতির পদ ছাড়া কিছুই পাননি। তাঁকে দেওয়া হয়নি তেমন কোনও সাংগঠনিক দায়িত্বও। অথচ নিজের এলাকায় এখনও তাঁর ইচ্ছেতেই বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খায়।

পোড়-খাওয়া নেতা শঙ্কর নিজে যদিও কোনও রকম তাড়াহুড়ো করতে নারাজ। বরং ‘ধীরে চলো’ ভঙ্গিতেই তিনি বেশি সচ্ছন্দ। তবে রানাঘাট-১ ও চাকদহ ব্লকে তাঁর অনুগামীদের অনেককেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জড়াতে দেখা গিয়েছে। সেই বিবাদ জিইয়ে রাখলে যে লোকসভা ভোটে কপালে দুঃখ আছে, তা তৃণমূল নেতারাও ভাল মতো জানেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁকে বৃত্তের বাইরে কেন রাখা হল, তা অনেকেরই বোধগম্য হচ্ছে না।

কেন্দ্রীয় বৃত্তের বাইরে ছিটকে গিয়েছেন আর এক বড় নেতাও— দলের জেলা যুব সভাপতি সত্যজিৎ বিশ্বাস। দলে নতুন না হলেও তিনি তরুণ প্রজন্মের নেতা। যে কোনও ভোট পরিচালনায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। যদিও দল সূত্রের খবর, এ বার পঞ্চায়েত ভোটে তাঁর ভূমিকায় সন্তুষ্ট নন রাজ্য নেতৃত্ব। তাঁর বিধানসভা এলাকায় প্রায় কোনও আসনেই বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেননি। মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন থেকে শুরু করে গণনার দিনেও ছাপ্পা হতে দেখেছে গোটা রাজ্য। দলের ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে।

কিন্তু সত্যজিৎকে পিছনের বেঞ্চে বসিয়ে রেখে কি আসন্ন লোকসভা ভোটে বিজেপির বাউন্সার সামাল দেওয়া সম্ভব— সংশয় রয়েছে দলেই। নিজের এলাকায় দলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে তাঁর প্রভাব যে কতটা, তা জেলা নেতারা ভালই জানেন।

বৃত্তের বাইরে থাকা এই নেতারা যদি স্রেফ ভাতঘুমও দেন, লোকসভা ভোটে সেমসাইড হয়ে যাবে না তো?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement