নিহত চিরঞ্জিতের স্ত্রী শর্মিষ্ঠা এবং তাঁদের শিশু সন্তান। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
ভাত বাড়ো আমি আসছি। রাত পৌনে এগারোটা নাগাদ স্ত্রীকে ফোন করে এমন কথা জানিয়েছিলেন বহরমপুরে গুলিতে খুন হয়ে যাওয়া তৃণমূল কর্মী চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। স্বামীর অপেক্ষায় ভাত বেড়ে বসেছিলেন স্ত্রী শর্মিষ্ঠা। আসতে দেরি হওয়ায় বেশ কয়েক বার ফোন করেও স্বামীর ফোনের সাড়া পাননি। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার গভীর রাতে খবর আসে চিরঞ্জিত আততায়ীর গুলিতে খুন হয়েছেন। বুধবার গোরাবাজারে মোহনের মোড়ের কাছে বাড়িতে বসে কান্না জড়ানো গলায় এমন কথা বলছিলেন শর্মিষ্ঠা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাজনীতি করতে গিয়ে আমার স্বামীর প্রাণ গেল। যারা এ কাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’
সূ্ত্রের খবর বছর বত্রিশের চিরঞ্জিত বহরমপুর পুরসভার অস্থায়ী কর্মী। প্রথম থেকে তিনি কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্রপরিষদ করতেন। ২০১৬ সালে তিনি দলবদল করে তৃণমূলে যোগ দেন। এর পরে ধীরে ধীরে বহরমপুর পুরসভার প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর তথা বহরমপুর শহর তৃণমূলের সভাপতি নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তিনি নাড়ুগোপালের ছায়াসঙ্গী হয়ে ওঠেন। বাড়িতে স্ত্রী, বছর দু’য়েকের ছেলে ও এক ভাই রয়েছে।
চিরঞ্জিতের ভাই প্রসেনজিৎ জানান, দাদা দুর্ঘটনায় জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে বলে রাত দেড়টা নাগাদ তৃণমূলের লোকজন খবর দেন। ইন্দ্রপ্রস্থের একটি বেসরকারি হাসপাতাল গিয়ে জানতে পারি দাদাকে গুলি করে খুন করা হয়েছে। আমরা চাই অভিযুক্তদের পুলিশ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করুক।
অন্য দিকে, মঙ্গলবারের খুনের ঘটনায় ধৃত সুমন রায়ের স্ত্রী গার্গী রায়েরও অভিযোগ, ‘‘আমার স্বামীকে ফাঁসানো হচ্ছে।’’ খুনের ঘটনায় সময় আপনার স্বামী কোথায় ছিলেন? এ প্রশ্নের উত্তরে গার্গী বলেন, ‘‘অসুস্থ থাকায় আমি ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছিলাম। স্বামী রাতে কোথায় ছিল আমি জানি না। এ দিন সকালে জানতে পারি আমার স্বামীকে ফাঁসানো হয়েছে।’’
সূত্রের খবর বহরমপুরের ইন্দ্রপ্রস্থে শহর তৃণমূলের সভাপতি নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে প্রায় দুশো মিটার দূরে সুমনের বাড়ি। সুমনের স্ত্রী গার্গী বহরমপুর পৌর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। সূত্রের খবর, সুমন আগে কলকাতায় থাকতেন। বছর দুয়েক থেকে সুমন বহরমপুরে বসবাস করছেন।
সুমনের পরিবারের দাবি, তিনি আগে ছাত্র পরিষদ করতেন। বর্তমানে তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। যদিও শহর তৃণমূল সভাপতির দাবি, ‘‘পুরসভায় কাজ করার কারণে আমার কাছে সব দলের লোক আসতেন। সে ভাবে সুমনও আসত। ও আমাদের দলের কেউ নয়।’’
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার অজিত সিংহ যাদব বলেন, ‘‘চিরঞ্জিতের সঙ্গে সুমনের ভাল সম্পর্ক ছিল বলে জানতে পেরেছি। কী ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’ পুলিশের এক আধিকারিক জানান, চিরঞ্জিতের নামে থানায় কোনও অভিযোগ নেই। তবে সুমন যেহেতু বেশ কয়েক বছর বহরমপুরের বাইরে থাকত। তাই তার বিরুদ্ধে কোনও থানায় কোনও অভিযোগ আছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্য দিকে, এ দিন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। পরে সেখান পুরসভা ভবন, বাড়ি হয়ে গোরাবাজার শ্মশানে নিয়ে গিয়ে মৃতদেহ সৎকার করা হয়।