শোকার্ত পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র
পুরনো আক্রোশের জেরে পিটিয়ে-কুপিয়ে খুন করা হল এক তৃণমূল নেতাকে। জমিজমা নিয়ে পারিবারিক কাজিয়ার জেরেই এই খুন বলে তাঁর বাড়ির লোকের অভিযোগ। পুলিশও তা-ই জানিয়েছে। কিন্তু তৃণমূল এ নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে বলে কংগ্রেসের অভিযোগ।
মৃতের নাম কাজিরুল বিশ্বাস (৫৫)। তৃণমূলের সাগরদিঘির বালিয়া অঞ্চলের সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। বাড়ি স্থানীয় নয়নডাঙা গ্রামে। শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ বাড়ি থেকে দেড়শো মিটার দূরে কয়েক জন রড, লাঠি ও ভোজালি নিয়ে তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কাজিরুলের চিৎকারে পড়শিরা ছুটে এলে তারা পালায়। আহত কাজিরুলকে প্রথমে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রাতে বহরমপুর মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় তাঁকে। শনিবার সকালে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
মৃতের ভাই মনিরুল বিশ্বাস তাঁদের পিসতুতো ভাই হাকিম শেখ, সাকিম শেখ, আনসার শেখ, তাঁদের তিন ছেলে, হাকিমের স্ত্রী, মৃতের ভগ্নিপতি এনসান শেখের নামে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ইতিমধ্যে এনসান শেখকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি অশোক দাস অবশ্য বহরমপুরে সাংবাদিকদের সামনে দাবি করেন, সাগরদিঘির কংগ্রেস নেতা সামশুল হোদার নেতৃত্বে দুষ্কৃতীরা কাজিরুলকে খুন করেছে। যদিও দলেরই বালিয়া অঞ্চল সভাপতি স্বদেশ চক্রবর্তীর কথায়, “এই খুনের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।’’ মৃতের স্ত্রী তানজিরা বিবিও তা-ই বলেছেন। সাগরদিঘি থানার ওসি জামালুদ্দিন মণ্ডল জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদে পূর্ব আক্রোশের জেরে খুন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। সেই কারণেই মৃতের এক আত্মীয় গ্রেফতার হয়েছে, আরও কিছু আত্মীয়কে খোঁজা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, দিন দু’তিন আগেই অভিযুক্তদের কয়েক জনকে তৃণমূলের মিছিলে হাঁটতে দেখা গিয়েছিল। পা ভেঙে গত দেড় মাস শয্যাশায়ী সামশুল হোদা বলেন, “মৃতের পরিবার ও পুলিশ জানে কারা এতে জড়িত। কারও মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক নোংরামি নিন্দনীয়।”
ছোট্ট গ্রাম নয়নডাঙার বেশির ভাগ পরিবারই কাজিরুলদের আত্মীয়। কাজিরুলেরা বিত্তশালী। তাঁর বাবার মৃত্যুর পর থেকেই জমিজমা নিয়ে বিবাদ শুরু হয়। মৃতের ভাইপো সাব্বির বিশ্বাসের দাবি, ওই বিবাদের জেরে বেলাল শেখ নামে এক আত্মীয়কে মারধর করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় হাকিম শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়। বছর দেড়েক আগে তার বদলা নিতে মারধর করা হয় হাকিমকে। অভিযুক্তদের হয়ে তদ্বির করেছিলেন কাজিরুল। সেই থেকেই তিনি নিশানা হয়ে যান।
সাব্বিরদের অভিযোগ, গায়ের ঝাল মেটাতেই কাজিরুলকে মারার ছক কষছিল হাকিম ও তার ভায়েরা। এর মধ্যে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া নিয়ে এনসানের সঙ্গেও অশান্তি হয় কাজিরুলের। তার বদলা নিতেই সে সে হাকিমদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল বলে পুলিশের দাবি।