বিপর্যয়েই চঞ্চলা তৃণমূলের লক্ষ্মী

এই পরিস্থিতিতেই আজ, রবিবার হরিণঘাটায় সভা করতে আসছেন তৃণমূলের সদ্যনিযুক্ত নদিয়া জেলা পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বদলে যিনি পর্যবেক্ষক হওয়াতেই চঞ্চলের সুদিন গিয়েছে বলে দাবি করছেন জেলা তৃণমূল নেতাদের একাংশ।

Advertisement

মনিরুল শেখ 

হরিণঘাটা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৯ ০২:০৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

কয়েকটা উইকেট ইতিমধ্যেই পড়ে গিয়েছে, কয়েকটা পড়ব-পড়ব করছে। প্রশ্ন উঠে গিয়েছে এত দিনের একচ্ছত্র তৃণমূল নেতা চঞ্চল দেবনাথের একাধিপত্য নিয়েও। হরিণঘাটা শহর সংগঠনের নেতারা আর তাঁকে মানতে রাজি হচ্ছেন না।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতেই আজ, রবিবার হরিণঘাটায় সভা করতে আসছেন তৃণমূলের সদ্যনিযুক্ত নদিয়া জেলা পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বদলে যিনি পর্যবেক্ষক হওয়াতেই চঞ্চলের সুদিন গিয়েছে বলে দাবি করছেন জেলা তৃণমূল নেতাদের একাংশ। পরে রাজীবের হাঁসখালিতেও যাওয়ার কথা। হরিণঘাটা ব্লকের দুটো পঞ্চায়েত নিয়ে বছর চারেক আগে তৈরি হয়েছে পুরসভা। তার অব্যবহিত আগেই ব্লক তৃণমূল সভাপতি ছিলেন চঞ্চল। তবে পুরসভা এলাকায় সভাপতি করা হয় উত্তম সাহাকে। তবে তৃণমূল সূত্রেরই দাবি, এক সময়ে শুধু নামেই সভাপতি ছিলেন উত্তম। শহর তৃণমূলের সব সিদ্ধান্ত নিতেন চঞ্চল নিজে। নবগঠিত হরিণঘাটা পুরসভায় রাজীব দালালকে পুরপ্রধান করার পিছনেও তাঁরই হাত ছিল। গত লোকসভা ভোটেও তিনি শহরের নেতাদের চালনা করেছিলেন।

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে পুর এলাকার মধ্যে। কিন্তু সেখানকার রাজনীতিও চঞ্চলেরই নিয়ন্ত্রণে ছিল এত দিন। তবে মাসখানেক ধরেই তাঁর বিরুদ্ধে শহরের নেতাদের একাংশের ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল। কিন্তু ভোটের ফল বেরনোর আগে তাঁকে সহ্য করা ছাড়া শহরের নেতাদের কোনও উপায় ছিল না। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, জেলার তৃণমূলের প্রাক্তন পর্যবেক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণেই চঞ্চলের এই রমরমা ছিল। পার্থ জেলায় এলে বেশিরভাগ সময়েই ফেরার পথে দাঁড়াতেন হরিণঘাটা শহরের সিমহাটের দলীয় কার্যালয়ে। সেখানে হাজির থাকতেন চঞ্চল। গত কয়েক বছরে আর জেলা রাজনীতিতে তাঁর উত্থানও হয়েছে ঝোড়ো বেগে।

Advertisement

যেমন জেলা পরিষদে সভাধিপতির পরেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল পূর্ত ও পরিবহণ দফতর। ওই দু’টি দফতরেরই কর্মাধ্যক্ষ হয়েছেন চঞ্চল। জেলা পরিষদের দলনেতাও হয়েছেন। অন্য এলাকার দলীয় সভাতেও তাঁকে নিয়ে যেতেন পার্থ। গত লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে দলনেত্রী পার্থকে জেলা পর্যবেক্ষকের পদ থেকে সরিয়ে ডোমজুড়ের বিধায়ক রাজীবকে দায়িত্ব দিতেই শহর তৃণমূলের একাধিক নেতা নড়চড়ে বসেছেন। চঞ্চলকে অগ্রাহ্য করার প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে।

এর সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে দলবদলের গল্পও। দিন কয়েক আগে হরিণঘাটা পুরসভার সাত কাউন্সিলর উত্তকর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়ায় মুকুল রায়ের বাড়িতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এখন শহরের রাজনীতিতে বোর্ড কী ভাবে বাঁচানো যায়, তা নিয়ে চিন্তিত তৃণমূল। দিন কয়েক আগে এই নিয়ে হরিণঘাটা শহর তৃণমূলের সভাপতি উত্তম সাহার বাড়িতে বাকি কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক হয়। তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শঙ্কর সিংহও সেখানে হাজির ছিলেন। কিন্তু চঞ্চল ছিলেন না। তৃণমূল সূত্রের দাবি: শঙ্কর জানতে চান, বৈঠকে চঞ্চলকে ডাকা হয়েছিল কি না। উপস্থিত অনেকেই জানান, ডাকা হয়নি, তার প্রয়োজনও নেই। তিনি এই শহরের নেতা নন। শেষমেশ তাঁকে বাদ রেখেই বৈঠক হয়।

শহর তৃণমূলের একাধিক নেতার দাবি, পার্থ পর্যবেক্ষকের পদ থেকে সরে যাওয়া এবং চঞ্চলের নিজের এলাকা নগরউখড়ায় দলের ভরাডুরির পরে তাঁকে আর তেমন গুরুত্ব দিতে রাজি নন দলের অনেকেই। হরিণঘাটা শহরের এক ছাত্রনেতার দাবি, ‘‘এই বাজারেও শহর থেকে তৃণমূল লিড পেয়েছে। কিন্তু দাদা (অর্থাৎ চঞ্চল) তো নিজের এলাকাতেই লিড দিতে পারেনি। তা হলে ওঁকে কেন গুরুত্ব দেওয়া হবে?’’ তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, চঞ্চল-ঘনিষ্ঠ রাজীব দালালকেও আর পুরপ্রধান না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা আসলে ঘুরপথে চঞ্চলকে বার্তা দেওয়ারই শামিল।

উত্তম সাহা বলছেন, ‘‘দলের নিয়ম অনুযায়ী ব্লক ও শহর স্বাধীন ভাবে সংগঠন করবে। চঞ্চলদা তো ব্লকের নেতা। ফলে শহরের রাজনীতিতে তাঁকে অনেকে না-ও চাইতে পারেন। এর বেশি কিছু বলব না।’’ রাজীব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ওঁকে পুরপ্রধান করার ব্যাপারে গোড়াতেই অনেকের বিরোধিতা ছিল। এখন আবার বেশ কয়েক জন কাউন্সিলর বিজেপিতে চলে গিয়েছেন। ফলে বোর্ড বাঁচানোর জন্য যা করার তা তো করতেই হবে।’’ চঞ্চল অবশ্য দাবি করেন, ‘‘আমায় শহরের নেতারা এখনও গুরুত্ব দেন। উত্তম সাহার বাড়ির ওই বৈঠকে আমাকেও যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না, কোনও একটা কারণের জন্য আমি যেতে পারিনি।’’ রাজীব অপসারণের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ওকে পদ থেকে সরালে যদি দলের ভাল হয়, সেটাই করা হবে। কারণ, ব্যক্তির উপরে দল।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement