বিজেপি দুর্গে তৃণমূলের মহামিছিল

গত লোকসভা ভোটে রানাঘাটে পরাজয়ের পরে তৃণমূল কর্মীদের একাংশের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছিল। দলের অনেক কার্যালয়েও তার প্রভাব পড়ছিল।

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার 

রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৪০
Share:

নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে পথে নামল তৃণমূল। রানাঘাটের মিছিলে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র

মাত্র সাড়ে ছ’মাস আগেই বিজেপিকে হাত উপুড় করে ভোট দিয়েছিল রানাঘাট মহকুমা। দু’লাখেরও বেশি ভোটে জিতেছিলেন জগন্নাথ সরকার। সোমবার সেখানেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জি ও নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে তৃণমূলের ডাকা মিছিল কার্যত মহামিছিলের চেহারা নিল।

Advertisement

গত লোকসভা ভোটে রানাঘাটে পরাজয়ের পরে তৃণমূল কর্মীদের একাংশের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছিল। দলের অনেক কার্যালয়েও তার প্রভাব পড়ছিল। কিছু কার্যালয়ের রং পালটে গেরুয়া হয়ে গিয়েছিল। এ দিন মহামিছিলের পরে তৃণমূলের নেতারা দাবি করছেন, সেই অবস্থাটা পাল্টে গিয়েছে। এ দিন যাঁরা মিছিলে শামিল হয়ে সং‌শোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, তাদের অনেকেই মুখচেনা নন। এবং তাঁদের অধিকাংশ হিন্দু, অনেকেই মতুয়া সম্প্রদায়ের।

প্রত্যাশিত ভাবেই, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন তৃণমূলের নেতারা। দলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক শঙ্কর সিংহের দাবি, “আমাদের কর্মীরা তো ছিলেনই, বহু সাধারণ মানুষও এই মিছিলে শামিল হয়েছিলেন। বিজেপির একের পর এক সিদ্ধান্তে তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তারা বুঝতে পারছেন, বিজেপি যে সর্বনাশা আইন নিয়ে আসছে তাতে কেউ শান্তিতে থাকতে পারবে না। এটা শুধু আমাদের দলের সমস্যা নয়। এটা সকলের সমস্যা। তাই সকলেই এই মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন।”

Advertisement

দুপুরে রানাঘাট নজরুল মঞ্চের সামনে থেকে বেরিয়ে মিছিল রানাঘাট শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরে। রানাঘাট মহকুমায় তৃণমূলের প্রায় সব নেতা-বিধায়কই তাতে শামিল ছিলেন। রাস্তার দু’পাশে ছাদে, বারান্দায়, জানলায় ছিল মুখের ভিড়। পরে ছোট বাজার এলাকায় মিছিলের শেষে সভা করা হয়। সেই সভায় রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, “ঝাড়খন্ডের বিধানসভার নির্বাচনের ফলই বলছে, বিজেপির মৃত্যুঘণ্টা বেজে গিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের পরে একটি রাজ্য বাদে সর্বত্র তাদের ভরাডুবি হয়েছে।’’

নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দুপুরে তেহট্টেও পথসভা করে তৃণমূল। পরে তেহট্ট বাজার থেকে হাউলিয়া পার্ক মোড় পর্যন্ত মিছিল করা হয়। নাগরিকত্ব বিরোধী আইনের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গই যে অগ্রণী তা মনে করিয়ে দিয়ে রানাঘাটে রাজীব বলেন, ‘‘এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ই প্রথম প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন। পরে দেশের অন্য রাজ্যে একই প্রতিবাদ হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি আমরা নাগরিক দিবস পালন করব।” তৃণমূল নেতাদের দাবি, বিজেপির পাতা হিন্দুত্বের ফাঁদে পা দিয়ে যে উদ্বাস্তুরা তাদের দিকে চলে গিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই ভুল বুঝতে পেরেছেন। তাঁরা শুভবুদ্ধির বশেই তৃণমূলের নেতৃত্বে আন্দোলনে শামিল হয়েছেন।

বিপুল ভোটে জিতলেও বিজেপি কিন্তু এখনও রানাঘাটে এই আইনের সমর্থনে কোনও বড় মিছিল বা সভা করেনি। ছোট-ছোট সভা করা হয়েছে। তবে কি তৃণমূলের দাবিই সত্যি? রাতে সাংসদ জগন্নাথ দাবি করেন, ‘‘আমরা আমাদের মতো করে ঠিকই প্রচার করছি। হাঁসখালিতে এর থেকেও বড় সভা করা হয়েছে।’’ তাঁর মতে, ‘‘যতই তৃণমূল ভুল বোঝানোর চেষ্টা করুক, হিন্দুরা জানে কারা তাদের সঙ্গে আছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেই তা প্রমাণ হয়ে যাবে।’’

(সহ প্রতিবেদন: সাগর হালদার)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement