মিষ্টির প্যাকেট প্লাস্টিকেই। বুধবার নবদ্বীপে। নিজস্ব চিত্র
জেলা সদর কৃষ্ণনগর প্লাস্টিক-মুক্ত ঘোষণা হলেও হেলদোল নেই নবদ্বীপের। প্লাস্টিকে মুখ ঢাকছে চৈতন্যধাম। আনাজ, মাছ-মাংস থেকে শুরু করে তেলেভাজা, মিষ্টি—সবই ফিনফিনে পলিব্যাগে করে অবাধে ঢুকে পড়ছে গৃহস্থের অন্দরমহলে।
অথচ বছর তিনেক আগেই ২০১৬ সালের ৩০ অগস্ট স্থানীয় পুরসভা নবদ্বীপকে প্লাস্টিকমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ঘোষণা করা হয়েছিল, ৫০ মাইক্রন ওজনের নীচে পলিপ্যাক ব্যবহার শাস্তিযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। মাইকে প্রচার, হ্যান্ডবিল বিলি—সবই হয়েছিল। সেইসময় পুরসভা কিছু দিন বাজারে, দোকানে আচমকা হানা দিয়ে পলিব্যাগ, প্লাস্টিকের কাপ বাজেয়াপ্ত করে। তার জেরে শহরে পলিব্যাগের ব্যবহার কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই প্লাস্টিক নিয়ে সেই কড়াকড়িতে উধাও হয়ে যায়। আবার পলিব্যাগের লাগামছাড়া ব্যবহার শুরু হয়ে যায় সর্বত্র। যেখানে-সেখানে তা জমে নিকাশি ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। দূষণ বাড়ছে। মানুষের স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে।
যদিও স্থানীয় মাছ বিক্রেতা ধ্রুব রায় বলেন, “পলিব্যাগ না দিলে অসন্তুষ্ট হন ক্রেতা।’’ আনাজের ফেরিওয়ালা থেকে বড় দোকানের মালিক - সকলের অভিজ্ঞতা এক। তাঁদের বক্তব্য, “মানুষ যদি সচেতন না-হয় তা হলে আমরা খামোখা সচেতন হতে গিয়ে ক্রেতা হারাব।” নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নিরঞ্জন দাস উদ্বিগ্ন স্বরে বলেন, “নিয়মানুযায়ী নবদ্বীপেও প্লাস্টিক নিষিদ্ধ। কিন্তু মানছে কে? বরং আগের থেকেও বেশি পলিব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে।” হাতেগোনা কিছু দোকান শুধু প্লাস্টিক বর্জনের নীতি এখনও মেনে চলে। এবং অভিযোগ, তাদের ক্রেতার ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়।
কৃষ্ণনগরকে যদি প্লাস্টিকমুক্ত করা যায় তা হলে নবদ্বীপে তা করা যাচ্ছে না কেন?বিষয়টি নিয়ে নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘‘পুরসভা তো পুলিশ নয়। আমরা প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার পর প্রায় ৬ মাস অভিযান চালিয়েছিলাম। তার পর বন্ধ করি, কারণ পুরসভার আরও অনেক কাজ আছে। লাগাতার এক কাজ করা সম্ভব নয়। মানুষের সচেতনতা প্রয়োজন। না-হলে হবে না।’’ কবে থেকে নবদ্বীপে প্লাস্টিক ফের নিষিদ্ধ করা যাবে এ ব্যাপারে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আগামী সপ্তাহ থেকে ফের বাজারে অভিযান শুরু হবে নিয়মিত। তখনই প্লাস্টিক আটকানো যাবে। হেরিটেজ নবদ্বীপ হবে প্লাস্টিকমুক্ত নবদ্বীপ।’’