গাছেও উৎসুক জনতা।
কনকনে ঠান্ডায় টনটন করে ওঠে বুকও। কুড়ি বছর আগের সেই জলঙ্গি আর এখনকার জলঙ্গির আকাশজমিন ফারাক। তবুও পদ্মাপাড়ের ওই বাঁকটা পেরোতে গেলে আজও ডুকরে কেঁদে ওঠেন অনেকে।
নদিয়া মুর্শিদাবাদে জানুয়ারি মানে তাই শুধু পিকনিক, পায়েস, উৎসব নয়। জানুয়ারি উসকে দেয় মৃত্যু-স্মৃতিও। আজ থেকে কুড়ি বছর আগে করিমপুরের একটি বাস ফিরছিল পিকনিক সেরে। বাসে ছিল ৭০ জন ছাত্র, ১০ জন ছাত্রী। পদ্মার ধার ঘেঁষে রাস্তা। জলঙ্গি বাজারের কাছে বড় বাঁকটা সেদিনও ছিল। কিন্তু রাস্তার পাশে কোনও বেড়া, খুঁটি, আড়াল ছিল না। ছিল জমাট কুয়াশা। রাস্তা ছেড়ে গড়িয়ে, পাল্টি খেয়ে বাস গিয়ে পড়ে পদ্মায়। ডুবে যায়।
করিমপুরের পান্নাদেবী কলেজ, জমশেরপুর বিএন হাইস্কুল, ধোড়াদহ হাইস্কুল, করিমপুর গার্লস হাইস্কুল, করিমপুর জগন্নাথ হাইস্কুলের তেরো থেকে আঠারো বছরের ছেলেমেয়ে সব। বাস থেকে বেরোতে পারেননি পিকনিকের প্রধান উদ্যোক্তা, শিক্ষক সনাতন দে-ও। সারা দিন ধরে একের পর এক ৬৪টি নিথর দেহ উদ্ধার করা হয় হিম-পদ্মা থেকে।
দিনটা ছিল ১৩ জানুয়ারি! ১৯৯৮।
সেই একই রাস্তা। সেই করিমপুর-বহরমপুর রাজ্যসড়ক। সেই ছুটে চলা বাস। সেতু ভেঙে জলে পড়ল বাস। সেই জানুয়ারি। ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮! কী করুণ সমাপতন!
চারদিক কুয়াশায় সাদা। হেড লাইট জ্বেলে আমতলা বেলডাঙা সড়ক ধরে ছুটছে বাস। বেলডাঙার দিকে যেতে বেগুনবাড়ি মোড় পার করে উল্টো দিকে থেকে আসা লরির মুখে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললেন চালক। রাস্তা ছেড়ে সোজা বাঁ দিকের নয়ানজুলিতে গিয়ে পড়ল বাস। মৃত ১০। জখম জনা কুড়িরও বেশি।
এ-ও সেই জানুয়ারির ঘটনা! ২০ জানুয়ারি, ২০১৮। জলঙ্গির সাদিখাঁরদেয়ারের মোশারফ হোসেন জলঙ্গির দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। এ দিনের দুর্ঘটনার তাঁর ভাইপো রিপন শেখ মারা গিয়েছেন। মোশারফ কাঁদছেন, ‘‘এ ভাবে আরও কত মৃত্যু দেখতে হবে, বলতে পারেন?’’
১৯৯৯ সালের ৫ মে রাতে কলকাতা থেকে মালদহ যাওয়ার বাস বহরমপুরে সেতু থেকে ভাগীরথীতে পড়ে গিয়েছিল। মারা যান ২৬ জন। ১৯৯৪ সালে ফরাক্কা ব্যারাজ থেকেও বাস পড়ে মারা যান ২২ জন।