প্রতীকী ছবি।
গ্রামে গ্রামে ১৪০০ টাকা কুইন্টাল দরেই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে সাগরদিঘির চাষিদের। সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে রমরমা সেই ফড়েদেরই। খোদ সাগরদিঘির পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের বেরাজুল ইসলাম নিজেই অভিযোগ পেয়ে গত দু’দিনে কিসান মান্ডিতে গিয়ে আটকে দেন দু’টি ধান বোঝাই লরি। ফড়েদের দাপট বিন্দুমাত্র কমেনি সাগরদিঘিতে।
মুর্শিদাবাদ জেলায় ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের সাগরদিঘি ব্লকে আমনের চাষ হয়েছে জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি, ৩৮ হাজার হেক্টর। সরকারি শিবিরে ধান বিক্রি করতে চান চাষিরা। কিন্তু অভিযোগ, ফড়েদের দাপটে ধান বিক্রি করতে পারছেন না চাষিরা।
মথুরাপুরের বিঘে ১৫ জমির মালিক এক্রামুল হক। বেশির ভাগটাতেই চাষ হয়েছে স্বর্ণ ধানের। ফলনও বিঘে প্রতি ১২ মন। সাগরদিঘির কিসান মান্ডিতে গিয়েও ধান বিক্রির টোকেন জোটেনি। এক্রামুল বলছেন, “সরকারি ঘোষণাই সার। সব দালালদের কব্জায়। তাই নিরুপায় হয়ে গ্রামেই বিক্রি করেছি ধান। ১৪০০ থেকে ১৪৫০ টাকা কুইন্টাল দরে।”
সাগরদিঘির পাশেই গ্রাম পোপাড়া গ্রামে বাড়ি কৃষিজীবী আব্দুল রাকিবের। তিনি বলছেন, “সেই কালীপুজোর সময় চাষিদের নাম লেখানো হয়েছিল ব্লকে। নতুন করে নাম লেখাতে গেলে নেতাদের ধরতে হচ্ছে। তার উপর ৫ থেকে ৭ কিলোগ্রাম করে ঢলতা কাটা হচ্ছে প্রতি কুইন্টালে। তাই বাড়িতে বসেই আড়তদারের লোক এসে ধান কিনে নিয়ে গিয়েছে। দাম কুইন্টাল প্রতি ১৪০০ টাকা করে পেলেও ঢলতা লাগেনি, পরিবহণ খরচও নেই।”
গাঙ্গাড্ডার চাষি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলছেন, “একটা সমবায় থেকে ধান কেনার শিবির করেছিল গ্রামে। তাও বেঁধে দেওয়া হয় ৭২ জন চাষির কাছে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা। ১০ কুইন্টাল করে ধান নিয়েছে তারা । তবে কুইন্টালে ঢলতা দিতে হয়েছে সাড়ে ৫ কিলোগ্রাম করে সকলকে।”
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অভিযোগ, “দুই প্রতিবন্ধী চাষির কাছ থেকেই প্রথম জানতে পারি সাগরদিঘিতে ফড়েরাজের কথা। পরে বহু চাষির অভিযোগ পেয়ে আমি নিজেই যাই কিসান মান্ডিতে। গিয়ে দেখি চাষির চেয়ে ফড়েদের সংখ্যা বেশি। ধানে কুইন্টাল প্রতি নিয়ম ভেঙে ঢলতা নেওয়া হচ্ছে। আমি প্রতিবাদ করে দু’টি ধান বোঝাই ট্রাককে আটকেও দিই। শুক্রবারই সব চাষিকে বলেছি কিসান মান্ডিতে ধান বিক্রি করতে না পারলে জানান। আমি নিজে যাব চাষিদের সঙ্গে নিয়ে।”
ঢলতা নেওয়ার কথা মেনেছেন জেলার খাদ্য নিয়ামক সাধন কুমার পাঠকও। তবে তাঁর ব্যাখ্যা, “সরকার যে ধান কিনবে, তাতে প্রতি কুইন্টালে ৬৮ কিলো করে চাল হওয়ার কথা। কিন্তু ধানের গুণগত মানের উপর সেটা নির্ভর করে। ধান ভিজে থাকা, ধানে অতিরিক্ত ধুলো ইত্যাদিতে উৎপাদন কমবে। এর জন্য সমস্ত সরকারি দফতরের লোকজনও আছে শিবিরে। তাঁরাই ঠিক করেন ধানের মান। তাতে ঢলতা ৫ থেকে ৭ কিলো করে কুইন্টালে কাটা যেতে পারে।”
সাগরদিঘির বিডিও শুভজিত কুণ্ডু অবশ্য বলছেন, “চাষিরা ধান বিক্রি করতে পারছেন না এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। আগে একজন ডিলার ছিল। এ বার তা বাড়িয়ে ৩ জন করা হয়েছে। ৮টি সমবায়ও রয়েছে। কোনও চাষি যদি চান কোনও গ্রামে ধান ক্রয় শিবির করাতে তা হলে আমাকে লিখিত ভাবে জানান, সেখানে শিবির করার ব্যবস্থা হবে।’’