—ফাইল চিত্র।
পড়শি রাজ্য অসমে এনআরসি নিয়ে হইচই শুরু হতেই আঁচ পড়েছিল সংখ্যালঘু প্রভাবিত মুর্শিদাবাদে। গত বছর তাই রেশন কার্ডের জন্য আঁকাবাঁকা লাইন কিলোমিটার ছাড়িয়েছিল বিভিন্ন বিডিও অফিসের সামনে। ভোটার তালিকায় নাম তোলা ও সংশোধনেও জেলার প্রায় সাড়ে ১২ লক্ষ মানুষ আবেদন করেছিলেন সে বার। এ বছরেও ভোটার তালিকায় কাজ শুরু হয়েছে, ১৮ নভেম্বর। কিন্তু সেই দীর্ঘ লাইন নেই।
সরকারি কর্মীরা বলছেন, ‘‘গত বছরের মতো সাড়া নেই, মানুষের আতঙ্ক থিতিয়ে গেছে।’’ তা হলে কি সত্যিই সেই ভিটে হারানোর ভয় হ্রাস পেয়েছে! মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সিরাজ দানেশ্বেরের ব্যাখ্যা, ‘‘গত বছর সিএএ-এনআরসি ইস্যুর জেরে বহু মানুষ নাম-ঠিকানা সংশোধনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। প্রায় সাড়ে ৯ লক্ষ মানুষের ভোটার তালিকায় নাম ঠিকানা সংশোধন করা হয়েছিল। সংশোধন যে সকলের হয়েছে তা হয়ত নয়। তবে, এ বার সেই হিড়িকটা কম দেখছি।’’
নতুন ভোটারদের কাছে তালিকায় নাম তোলার জন্য জেলা প্রশাসন অবশ্য এখন প্রচার চালিয়ে য়াচ্ছে— ‘আর মাত্র ৬ দিন। দ্রুত লাম লেখান।’ কিন্তু তাতেও তেমন সাড়া নেই। লকডাউনের ছায়া যেন এখনও ছড়িয়ে রয়েছে জেলার আনাচ কানাচে। গত বছর নতুন ভোটার তালিকায় নাম তুলে নাগরিকত্বের সরকারি সিলমোহর পেতে আবেদন করেছিলেন ২ লক্ষ ৭৩ হাজার নব্য ভোটার সেই সঙ্গে নাম-ঠিকানা সংশোধনের জন্য প্রায় ৯ লক্ষ ৩৮ হাজার আবেদন জমা পড়েছিল। ১৮ নভেম্বর ভোটার তালিকার কাজ শুরু হয়েছে।
বুধবার পর্যন্ত জেলায় এক লক্ষ ৪৩ হাজার ৭৯৮টি আবেদন জমা পড়েছে। তার মধ্যে ভোটার তালিকায় নতুন নাম তোলার আবেদন ৬০ হাজার ৮৯১টি। আগ্রহে এত হ্রাস কেন— সে প্রশ্নের জবাব খুঁজতে সাধারন মানুষের সঙ্গে আলোচনায় উঁকি দিতেই মালুম হয়েছে বিষয়টি।
নওদার এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘এ রাজ্যে সহজে এনআরসি লাগু হবে বলে মনে হয় না। তাই গ্রামের অনেকের মতো আমিও আর লাইনে দাঁড়াইনি।’’ তবে, তার সঙ্গে প্রলম্বিত লকডাউনের জেরও রয়েছে। নতুন করে সংশোধনী শুরু হলেও পরিবহণের অভাবে অনেকেই গ্রামের বাইরে পা রাখতে সাহস পাচ্ছেন না।
তবে তালিকায় নাম তোলানোর জন্য প্রশাসনের চেষ্টা চালাচ্ছে এখনও। মুর্শিদাবাদের নির্বাচন দফতরের আধিকারিক সমুন বিশ্বাস বলেন, ‘‘ভোটার তালিকায় নাম তোলা ও সংশোধনের জন্য কন্যাশ্রি-২ প্রকল্পের ছাত্রীদেরও মোবাইলে এসএমএস করে তালিকায় নাম তোলার কথা বলা হয়েছে।’’