মৃতের পরিবার। নিজস্ব চিত্র
বিদেশে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছেলে। এখন কী ভাবে তাঁর মৃতদেহ ফেরানো হবে সেই ভাবনায় দিশেহারা তাঁর স্ত্রী ও বৃদ্ধা মা। মুরুটিয়ার রাখালগাছি গ্রামের ওই পরিবার দ্বারস্থ হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের। তাঁদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কর্তারা। কিন্তু তাতে উদ্বেগ কমছে না পরিবারের মহিলাদের।
মৃত ওই যুবকের নাম অজয় মণ্ডল। পারিবারিক সূত্রের খবর, বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবক প্রায় আড়াই বছর হল সৌদি আরবের রিয়াধে দিনমজুরের কাজ করতেন। তাঁর রোজগারেই হতদরিদ্র পরিবারের দিন চলত। চলতি বছর মার্চ মাসে অজয় শেষবারের মতো বাড়ি এসেছিলেন। মে মাসে তিনি রিয়াধে ফিরে যান। গত শনিবার ফোনে তাঁর মৃত্যুসংবাদ আসে। তবে, মৃত্যু নিয়ে কোনও অভিযোগ তোলেননি পরিবারের লোকেরা।
অজয়বাবুর স্ত্রী নীপা মণ্ডলের কথায়, ‘‘গত ৩ নভেম্বর স্বামীর সঙ্গে টেলিফোনে শেষ কথা হয়েছিল। ও জানিয়েছিল, শরীর খুব খারাপ। খুব জ্বর এসেছে। মাঝে কয়েক দিন আর কথা হয়নি। শরীর যে এতটা খারাপ হয়েছে জানতে পারিনি।’’ তিনি জানান, রিয়াধে অজয়ের সঙ্গেই থাকেন দীঘলকান্দির বাসিন্দা মনোজ ওঝা এবং সুব্রত বিশ্বাস। তাঁরাই গত ১০ নভেম্বর ফোন করে তাঁর মৃত্যুসংবাদ দেন। তাঁদের কথা অনুযায়ী, শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ প্রবল অসুস্থ হয়ে পড়েন অজয়। তাঁকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে তাঁর মৃত্যু হয়। নীপার কথায়, ‘‘বিদেশ থেকে কী ভাবে মৃতদেহ আনবো বুঝতে পারছি না। বিডিওকে জানিয়েছি। সাহায্য চেয়েছি।’’
বাড়িতে নীপা তাঁর পাঁচ বছরের মেয়ে ও শাশুড়িকে নিয়ে থাকেন। অজয়ের মা অনিমা মণ্ডলের কথায়, “খুব ছোট বয়সে অজয়ের বাবা মারা যাওয়ায় অজয় লেখাপড়া করতে পারেনি। ছোট থেকেই মাঠে কাজ করতে হয়েছে পেটের তাগিদে। শরীর হয়তো আর ধকল সহ্য করতে পারেনি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বিয়ের পরে বেশি টাকা রোজগারের আশায় বিদেশে যায়। এত দিন আমরা চালাঘরে থাকতাম। কিছুদিন আগে সরকার থেকে একটা পাকা ঘর হয়েছে। মাস ছয়েক আগে অজয় বাড়িতে এসে সেই ঘর মেরামত করে গিয়েছিল। বলে গিয়েছিল, দশ বছর বিদেশে কাজ করলে সংসারের সব অভাব দূর হবে। মেয়েকে ভাল স্কুলে পড়াতে পারব। সব শেষ হয়ে গেল।”
স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের দেহ ফিরিয়ে আনার বিষয়টি দেখে বিদেশ দফতর। মৃতের সমস্ত তথ্য প্রশাসনের কাছে দিতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সরকারি ভাবে আর যা-যা সুবিধা ওই পরিবারকে দেওয়া যায় তা দেওয়া হবে।’’