বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ক্লাস। লকডাউনের আগে।
কয়েক মাস ধরে সব ধরনের থেরাপি বন্ধ। থমকে খেলাধুলোও। দীর্ঘ লকডাউনের জেরে তাই অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন অভিভাবকেরা।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিভিন্ন থেরাপি, বিশেষ শিক্ষার মাধ্যমে পড়াশোনা-সহ নানা কাজ শেখানো হয়। অনলাইনে তা শেখাতে নাজেহাল অভিভাবকেরা।
অকুপেশনাল, স্পিচ, বিহেভেরিয়াল থেরাপি যে অনলাইনে সম্ভব নয় তা মনে করছেন বিশেষজ্ঞরাও। এ সব ক্ষেত্রেই বাচ্চাদের সাথে সামনাসামনি বসে কাজ করা হয়। লকডাউনের ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, থেরাপি সেন্টার বন্ধ থাকায় বাচ্চারা শিক্ষাগ্রহণ করতে পারছে না। ফলে তারা পিছিয়ে পড়ছে বলে দুঃশ্চিন্তায় অভিভাবকরা। বিশেষ অভিভাবক সুস্মিতা রায় বলেন, ‘‘শিক্ষকদের কথা মেনে কাজ করাচ্ছি। কিন্তু বিশেষ শিক্ষকের কাজ কি আর আমরা পারি। অনলাইনে কতটুকুই বা কাজ করাতে পারছি।’’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটিস্টিক শিশুদের মূল সমস্যা হয় সামাজিকতায়। অনেকেই নিজের সমস্যার কথা বোঝাতে পারে না। অনেক শিশুর কথা বলায় সমস্যা হয়। বিভিন্ন থেরাপির মাধ্যমে সেই সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা যায়। এ ছাড়া অটিস্টিক শিশুরা অনেক সময়েই নির্দিষ্ট কোনও একটি কাজ নিয়ে মগ্ন থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু তা থেকে বের করে দৈনন্দিন কাজ শেখানো, পড়াশোনা থেরাপির মাধ্যমে করানো হয়। নিয়মিত থেরাপি দিতে পারলে অনেকেই অনেক দূর পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সেই শিক্ষাগ্রহণে কারও সময় হয়তো বেশি লাগে, কিন্তু পরিবার ও পরিপার্শ্ব পাশে থাকলে শেষ পর্যন্ত সেই শিখর তারা ছুঁতে পারে।
বহরমপুরে কয়েক বছর ধরে কয়েকটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ শিক্ষা দিচ্ছে। তারাও অনলাইনে শিশুদের পড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। এমনই একটি প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় প্রধান সঞ্জীব চক্রবর্তী বলেন, “অনলাইনে আমরা যা বলছি, তা অভিভাবকরা দেখছেন। কিন্তু তাঁদের পক্ষে বিশেষজ্ঞদের মতো বাচ্চাদের শেখানো অসম্ভব। তাতে শিশুদের বিশেষ লাভ হচ্ছে না।”
এই পরিস্থিতিতে ওই বাচ্চারা একঘেয়ে পরিবেশে বিরক্ত হয়ে পড়ছে। রাগ বাড়ছে। অসহিষ্ণুতা বাড়ছে দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন অভিভাবকরা। অভিভাবক সঞ্চালী মণ্ডল বলেন, “আমার ছেলে লকডাউনের আগে মাঠে খেলতে যেত বন্ধুদের সঙ্গে, স্কুলের নাচ গান প্রভৃতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। লকডাউন ওকে বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। ফলে মানসিক সমস্যা শুরু হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ওর ভাল দিকটা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে বলে চিন্তা হয়।” অকুপেশনাল থেরাপিস্ট সৌম্যরঞ্জন দাস বলেন, “তাই একজন একজন করে অভিভাবক তাদের বাচ্চাদের নিয়ে এসে থেরাপি ক্লাস শুরু করা যায় কি না, ভেবে দেখতে পারেন।” মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলছেন, “অতিরিক্ত অসুবিধা হলে অভিভাবকরা সরাসরি বা টেলি মেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।’’