এক ঝটকায় দেখলে মনে হবে ধাবা বন্ধ। কিন্তু একটু এগিয়ে যেতেই ভুল ভাঙে। সামনে থেকে দোকানের ঝাঁপ নামানো। কিন্তু ভিতরে দিব্যি বিকিকিনি চলছে। পাশের সরু গলিতে বেশ কিছু লোকজনও যাতায়াত করছে। এ দিক ও দিক দেখে নিয়ে বছর বাইশের এক যুবক বললেন, ‘‘কী দাদা, লাগবে নাকি? সামান্য কিছু বেশি দেবেন। আমার সঙ্গে আসুন।’’
রবিবার নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের জাতীয় ও রাজ্য সড়ক লাগোয়া বহু ধাবা ও মদের দোকানে বেচাকেনা চলল এ ভাবেই। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, জাতীয় ও রাজ্য সড়ক থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে মদের দোকান বা বার রাখা চলবে না। সেই মতো, শনিবার, ১ এপ্রিল থেকেই রাস্তার ধারের বহু মদের দোকান ও পানশালা বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকেরা।
কিন্তু তার পরেও বেশ কয়েক জায়গায় ঢুঁ মেরে দেখা গেল, দোকান কিংবা পানশালা বাইরে থেকে বন্ধ হলেও অন্য পথে দিব্যি চলছে বেচাকেনা। কোথাও দোকানের স্টক শেষ করতে নির্ধারিত দামের থেকে বেশ কিছুটা কমে মদ বিক্রি হয়েছে। কোথাও আবার বেশি দাম দিতে হয়েছে। কৃষ্ণনগরের এক যুবক যেমন বলছেন, ‘‘এ বছরের ১ এপ্রিল দিনটা কিন্তু মনে রাখার মতো। মোটরবাইক বিক্রেতারা বিস্তর ছাড়ে বাইক বিক্রি করলেন। শনিবার থেকে দেখছি অনেক মদ বিক্রেতাও কম দামে মদ বিক্রি করে দিচ্ছেন। কেউ ভেবেছিলেন, সেলের বাজারের মতো মদ ও বাইকও কেনা যাবে!’’
নদিয়ার লাইসেন্সপ্রাপ্ত এক মদের দোকানের মালিক বলছেন, ‘‘কোর্ট তো নির্দেশ দিয়ে দিল। কিন্তু আমরা কোথায় যাব বলুন তো? দোকানে, গুদামে বিস্তর টাকার মদ তুলে রেখেছি। সেগুলো তো ফাঁকা করতে হবে। তাই লাভ কম রেখে নির্ধারিত মূল্যের থেকে কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছি।’’
যাঁরা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাঁরা ছুটেছেন রাস্তার ধারের হোটেল কিংবা ধাবাতে। সেখানেও দেদার মদ বিকিয়েছে। তবে বেশি দাম মেটাতে হয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলায় হোটেল কাম বার এবং বৈধ মদ বিক্রির কাউন্টার মিলিয়ে রয়েছে ৭৬টি। তার মধ্যে ৫টি বাদ দিয়ে বাকি সবগুলোই রাজ্য ও জাতীয় সড়কের ৫০০ মিটারের মধ্যে। বহরমপুরে ২২টি বার ও কাউন্টার ছিল। তার মধ্যে খাগড়া এলাকায় তিনটে, গোরাবাজার এলাকায় ১টি এবং বহরমপুর স্টেশন লাগোয়া শিল্পতালুকের একটি হোটেল কাম বার ওই আওতার বাইরে।
এ দিন সেখানে মদ বিক্রির পরিমাণ এক লাফে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। ভিড় সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন কাউন্টার কর্তৃপক্ষ। বহরমপুরের এক ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘অতশত নিয়ম কানুন বুঝি না বাপু। ওই ভিড় ঠেলে মদ কেনা সম্ভব নাকি! তার চেয়ে বাড়তি কিছু টাকা দিয়ে অন্য জায়গা থেকে মদ কিনেছি।’’
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত এক হোটেল কাম বারের মালিক মালিক অমিত সরকারের অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাঁরা রাতারাতি বার বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু শনিবার থেকেই বেআইনি ভাবে মদ বিক্রিও বেড়ে গিয়েছে। নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “বেআইনি ভাবে মদ বিক্রি করলে তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’