প্রতীকী ছবি
মাধ্যমিক হোক আর উচ্চমাধ্যমিক প্রতি বছর মুখিয়ে থাকে জেলাবাসী রাজ্যস্তরে মেধা তালিকায় মুর্শিদাবাদের ছেলে মেয়েদের নাম শুনতে পাওয়ার উৎসাহে। বছর তিনেক ধরে এই উৎসাহ আরও বেড়েছে শহরের দুটি বিদ্যালয়ের সৌজন্যে। বহরমপুর জেএনএকাডেমি এবং গোরাবাজার ঈশ্বরচন্দ্র ইন্সটিটিউশন (আইসিআই)। কান্দি রাজ হাইস্কুলের ছাত্ররাও মেধাতালিকায় থাকে। সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের ছেলেরা প্রথম দশে না থাকলেও প্রথম কুড়ি জনের মধ্যে থাকে। এই স্কুলের প্রায় সকলেই মোটামুটি ভাল ফল করে। সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের সহ-প্রধান শিক্ষক সুদীপ্তকুমার চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের অনেক পড়ুয়া প্রথম দশে না থাকলেও কুড়ির মধ্যে থাকে। তার চেয়েও বড় কথা, সকলেই ভাল নম্বর পায়। পড়ুয়াদের সার্বিক উন্নতিই আমাদের লক্ষ।” কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলেরও বক্তব্য একই। তাদের বক্তব্য, মেধাতালিকা ছুঁতে না পরলেও, স্কুলের পরীক্ষার্থীরা বেশিরভাগই আশি শতাংশের উপরে নম্বর পায়। এই স্কুলের প্রধানশিক্ষক হিমাদ্রী চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘সার্বিক ভাবে ভাল ফল হচ্ছে নিয়মিত। এটাই তো বড় সাফল্য।’’
গোরাবাজার আইসিআই-এর ভাল ফলাফলের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে অভিভাবক প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা ছাত্রদের ভালো ফলাফলের কারণ বলে মনে করেন। বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষক জামরুল হক বলেন, “স্কুলের শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবকদের মধ্যে ভাল সম্পর্কই আমাদের সাফল্যের কারণ।’’ ২০১৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মিলেছিল রাজ্য স্তরে সপ্তম স্থান দখলের সাফল্য। চলতি বছরে মাধ্যমিকে রাজ্য স্তরে পঞ্চম স্থান দখল করেছে আইসিআই।
বহরমপুর জেএনএকাডেমি ২০১৫ সালে মাধ্যমিকে রাজ্য স্তরের মেধাতালিকায় পঞ্চম স্থান, ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে যুগ্ম পঞ্চম ও সপ্তম স্থান পেয়েছে। ২০২০ সালে মাধ্যমিকে প্রথম দশে এসেছে সেই জেএনএকাডেমিরই ছাত্র। ওই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র শৈবাল রায় বলছেন, “আমাদের সময় খেলাধুলোর বা অন্যান্য কাজকর্মের থেকে বিদ্যালয়ে পড়াশোনাকেই গুরুত্ব দেওয়া হত। যার ফলে বিদ্যালয়ে ভর্তি হতো তেমন পড়ুয়ারাই। এমনকি বেশ কিছু ছাত্র মাঝপথে নিজের বিদ্যালয় ছেড়ে এই বিদ্যালয় ভর্তি হত শুধুমাত্র বেশি নম্বর পাওয়ার তাগিদে। তারই ফল মিলছে স্কুলে।’’
জঙ্গিপুরের জোতকমল উচ্চবিদ্যালয়ও জেলার নাম উজ্জ্বল করেছে। এই স্কুলের অনেক পড়ুয়ার প্রাপ্ত নম্বর রাজ্যের মেধা তালিকার প্রথম দশে না হলেও, প্রথম কুড়ি-তিরিশ জনের মধ্যে থাকে। প্রধান শিক্ষক শিবশঙ্কর সাহা বলেন, ‘‘আমাদের বিদ্যালয় থেকে ২৮৭ জন উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছিল সবাই পাশ করতে পারেনি। কিন্তু রাজ্যের মেধা তালিকায় সম্ভাব্য ষষ্ঠ হয়েছে আমাদের বিদ্যালয়ের পড়ুয়া।” তিনি বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ে প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া থাকার জন্যই এমন ফলাফল হয়। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে অনেকে পড়তে আসে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি।’’
শিক্ষক কল্যাণ ঘোষ বলেন, ‘‘কয়েক জন মেধা তালিকাতে রয়েছে, এটা বড় কথা নিশ্চয়। কিন্তু প্রথম দশেই শুধু নজর দিলে হবে না, তার চেয়েও বড় কথা সার্বিক ফল ভাল হচ্ছে।’’