খাদ্য আন্দোলনের স্মারকে পড়ল হাতুড়ির ঘা

ইতিহাসের অপসারণ

সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য এস এম সাদি বলেন,  “মঞ্চটি খাদ্য আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাসকে বহন করত। ইতিহাসকে ওরা মুছে দিতে চাইছে।”

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৮ ০৭:০০
Share:

ভেঙে ফেলা হচ্ছে শহিদবেদি সংলগ্ন সভামঞ্চ। নিজস্ব চিত্র

১৯৬৬ সাল। রাজ্যের পাশাপাশি কৃষ্ণনগরেও আছড়ে পড়ল খাদ্য আন্দোলনের ঢেউ। আন্দোলন স্তিমিত হওয়ার পরে বিশিষ্টজনেরা মিলে তৈরি করেন নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি। শহিদদের স্মরণে পাবলিক লাইব্রেরির মাঠে তৈরি হল শহিদবেদি। তৈরি হল স্থায়ী একটি মঞ্চও। সে সময়ে এই মঞ্চ তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা নেয় বামপন্থী ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্ট ফেডারেশন। তাদের সেই অবদানের কথা স্বীকার করে একটি ফলকও বসানো হয়।

Advertisement

অথচ, সংস্কারের নামে ভেঙে ফেলা হয়েছে স্মৃতিবিজড়িত-ঐতিহাসিক ওই মঞ্চ! চরম অবহেলায় পাথরের ফলক ছুড়ে ফেলা হয়েছে মাঠের কোণে, জল-কাদায়।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য এস এম সাদি বলেন, “মঞ্চটি খাদ্য আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাসকে বহন করত। ইতিহাসকে ওরা মুছে দিতে চাইছে।” স্থানীয় সূত্রে খবর, সেদিনের খাদ্য আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে অনেকেই আজ সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের মধ্যে অনেকে আজকের শাসকদলের নেতাও। যে কারণে খাদ্য আন্দোলন ঘিরে ডান-বাম নির্বিশেষে সকলের মনেই আলাদা একটি শ্রদ্ধামিশ্রিত আবেগ কাজ করে। সে কারণেই স্থানীয় একাংশের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ আদতে ইতিহাস সচেতনতার অভাবের নিদর্শন। অন্য দিকে, কারও মত, আসলে এ কাজ সংকীর্ণ রাজনৈতিক অভিসন্ধি। প্রবীণ এক বাসিন্দার ক্ষোভ— ‘‘মঞ্চটি এতদিন ধরে উত্তাল দিনগুলির স্মৃতি বহন করছে। সংস্কারের নামে তা ভেঙে ইতিহাসকে আঘাত করেছে পুরসভা।’’

Advertisement

সভামঞ্চ গড়তে আর্থিক সাহায্যের আবেদন পত্র। নিজস্ব চিত্র

এ নিয়ে সহমত পোষণ করছেন এ সময়ের ইতিহাসবিদেরা। তাঁদের মতে, একটি জাতি কীভাবে নিজের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করছে, তার উপরেই সে সভ্যতার অগ্রগমনের উৎকর্ষতা নির্ভর করে। এক্ষেত্রে সেটা ঘটছে না বলেই মনে করছেন তাঁরা।

দীর্ঘদিন ডানপন্থী ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত স্বদেশ রায় বলছেন, “ব্যক্তিগত ভাবে যে রাজনৈতিক মতবাদই বিশ্বাস করি না কেন, ইতিহাসকে রক্ষা করা সকলের কর্তব্য। মূল কাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখেই সংস্কার করা উচিত ছিল।” যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল পরিচালিত কৃষ্ণনগর পুরসভা। কর্তৃপক্ষের দাবি, জীর্ণ হয়ে যাওয়া মঞ্চটিকে উন্নত মানের করা হচ্ছে। পুরপ্রধান অসীম সাহা বলেন, ‘‘ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমতি নিয়েই এর পুর্ণনির্মাণ চলছে। এর পিছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য খুঁজতে চাইলে আমাদের কিছু করার নেই।”

আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ভাবে অংশ গ্রহণকারী তথা তৎকালীন নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য শিবনাথ চৌধুরী বলেন, ‘‘পুরসভাকে অনুরোধ করেছি, যেন সমস্ত ফলকই আবার বসানো হয়।” তবে স্টুডেন্ট ফেডারেশনের ফলকটি যে নতুন করে আর বসানো হবে না, সে কথা স্পষ্ট করেছেন পুরপ্রধান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement