ভেঙে যাওয়া লক গেট। ফরাক্কায়।
আশঙ্কা সত্যি করে ফের ভাঙল ফরাক্কা ব্যারাজের আরও একটি লকগেট! এই নিয়ে গত কয়েক বছরে ১০টি গেট ভাঙার ঘটনা ঘটল।
শনিবার সন্ধ্যায় ব্যারাজের ২৩ নম্বর গেটটি জলের তোড়ে ভেঙে পড়ে। ফলে গঙ্গার বাড়তি জল বয়ে যেতে শুরু করে বাংলাদেশের দিকে। এখন শুখা মরসুম। জলের বাড়তি চাপও নেই। কিন্তু এখনই যদি গেট ভেঙে পড়ে, আসন্ন বর্ষায় কী হবে তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে সব মহলেই।
রবিবার সকালে ফরাক্কা ব্যারাজের জেনারেল ম্যানেজার শৈবাল ঘোষ ঘটনাস্থলে যান। লকগেট ভেঙে যাওয়াকে নেহাতই দুর্ঘটনা বলে তিনি মন্তব্য করেন, “মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই ওই গেট মেরামত করা হবে।”
শৈবালবাবু চার-পাঁচ দিনের মধ্যে গেট মেরামতির কথা বললেও অতীত অভিজ্ঞতা মোটেই স্বস্তির নয়। ফরাক্কা ব্যারাজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১৭ নম্বর, ২০০৮ সালের জুন মাসে ৭৪ নম্বর গেট ভাঙে। ২০১২ সালে ওই গেট দু’টি মেরামত করে বসানো হয়। ২০১০ সালেও চারটি গেট ভেঙে পড়ে। প্রায় ৪২ মাস পরে সেগুলো সারানো হয়। ২০১১ সালেও দু’টি গেট ভাঙে। সেগুলো বসানো হয় ছ’মাস পরে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ফরাক্কা ব্যারাজের এক ইঞ্জিনিয়ার জানাচ্ছেন, ব্যারাজের সমস্ত লক গেটই জলের নীচে থাকে এবং প্রচণ্ড জলের চাপ সহ্য করতে হয়। তাই অন্তত চার বছর অন্তর গেটে রং করা জরুরি। কিন্তু ২০১৩ সালের সিএজির অডিটে ধরা পড়ে ১২৩টি গেটে গড়ে ৫ থেকে ২০ বছর রং হয়নি। ফলে মরচে পড়েছে।
২০১১ সালের জুলাইয়ে সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের বিশেষজ্ঞরা ব্যারাজ পরিদর্শনে আসেন। একই সময়ে ফরাক্কা ব্যারাজের বিশেষজ্ঞেরাও অন্য এক বিশেষজ্ঞ সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে যৌথ পরিদর্শন করে গেটগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখেন।
পরিদর্শনের পরে দু’তরফের রিপোর্টেই বলা হয়, ৩৬ বছর ধরে ব্যবহারের ফলে গেটগুলি একেবারে ভগ্নদশায় এসে ঠেকেছে। ব্যারাজের ‘হেড-রেগুলেটর’গুলির অবস্থাও বিপজ্জনক। তা যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। সমস্ত লক গেট এতটাই ক্ষয়ে গিয়েছে যে, তা আর মেরামতির অবস্থায় নেই। ওই রিপোর্টে সমস্ত গেট বদলে ফেলার সুপারিশ করা হয়। ফরাক্কা ব্যারাজের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইসরি কমিটিও ২০১১ সালে সব গেট নতুন ভাবে বসানোর অনুমোদন দেয়।
কিন্তু ফরাক্কার ইঞ্জিনিয়ার মহল থেকে বার বার অভিযোগ তোলা হয়েছে, ফরাক্কা ব্যারাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণে সে ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফরাক্কা ব্যারাজের এক কর্তা বলছেন, “ব্যারাজ রক্ষণাবেক্ষণে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রক পর্যাপ্ত অর্থ যে দেয়নি তা-ও নয়। কিন্তু বরাবরই দেখা গিয়েছে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ ব্যারাজ রক্ষণাবেক্ষণের থেকেও বেশি তৎপরতা দেখিয়েছেন গঙ্গা, পদ্মার ভাঙন রোধের কাজে।’’
২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত একাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ১৫.১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে ফিডার ক্যানালের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। অথচ খরচ করা হয়েছে মাত্র ৭০ লক্ষ টাকা।
২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ব্যারাজকে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রক ৫৩০.৯২ কোটি টাকা পাঠিয়েছে। ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ এই টাকার বেতন বাবদ ২৮ শতাংশ ও ভাঙন রোধের কাজে খরচ করেছেন ৩৫ শতাংশ। অথচ ব্যারাজের রক্ষণাবেক্ষণে খরচ করা হয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ টাকা।