—প্রতীকী চিত্র।
ছুটির ফাঁদে পড়ে হাঁসফাঁস করছে রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলির পড়ুয়ার দল। গরম পড়লেই সাত তাড়াতাড়ি অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া চলছে। বিগত কয়েক বছর যাবত এই রাজ্যে সরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে এটাই যেন অলিখিত নিয়ম হয়ে উঠেছে। কম-বেশি দেড় থেকে দুই মাসের দীর্ঘ ছুটিতে স্বাভাবিক ভাবেই পঠনপাঠন শিকেয় উঠেছে। বিশেষ করে, ছুটির কারণে স্কুল বন্ধ থাকলে গ্রামীণ অঞ্চলের পড়ুয়াদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে ওঠে। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করছে। এত দীর্ঘ দিন স্কুল ছুটি থাকা নিয়ে অভিভাবকদেরও আপত্তি রয়েছে। তা সত্ত্বেও শিক্ষা দফতরের কোনও হেলদোল নেই। বরং প্রতি বছর প্রলম্বিত গরমের ছুটি তার পুরনো রেকর্ড ভেঙেই চলেছে।
অথচ, ওই একই আবহাওয়ায় বেসরকারি স্কুলগুলি যথারীতি খোলা থাকছে। সে সব স্কুলের পড়ুয়ারা এই গরমেও সকাল, দুপুর জুড়ে ক্লাস করছে, পরীক্ষা দিচ্ছে। রাজ্যের প্রায় কোনও বেসরকারি স্কুলেই এখনও গরমের ছুটি পড়েনি। অন্য দিকে, সরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে স্কুল যাওয়া বন্ধ। গত ২২ এপ্রিল থেকে গরমের ছুটি চলছে। যদিও শিক্ষাবর্ষের শুরুতে প্রকাশিত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এ বার সরকারি স্কুলগুলির জন্য গরমের ছুটি ধার্য ছিল ৯ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ দফায়-দফায় বিজ্ঞপ্তি জারি করে সেই ছুটি এগিয়ে আনে ২২ এপ্রিল। সব চেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হল— ওই বিজ্ঞপ্তিতে কবে সরকারি স্কুল খুলবে, সে সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি। বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশিকার আগে পর্যন্ত এই গরমের ছুটি চলতে থাকবে। অতএব,
পাঠশালা বন্ধ!
এই অস্বাভাবিক লম্বা গরমের ছুটির ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে পড়ুয়াদের মধ্যে। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, অন্য সব কিছু ছেড়ে দিলেও লম্বা সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকার ফলে পাঠ্যক্রমের শোচনীয় হাল হচ্ছে। কেননা, স্কুল বন্ধ থাকায় যত শিখনদিবস নষ্ট হচ্ছে, স্কুল খোলার পর সেই দিনগুলি পড়ুয়াদের ফিরিয়ে দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা থাকছে না। একটি শিক্ষাবর্ষ থেকে যদি টানা দুই মাস বাদ চলে যায়, তা হলে সেই ঘাটতি পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। এর জন্য কোনও বিকল্প ভাবনা শিক্ষা দফতরের তরফে এখনও পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। ফলে, পড়ুয়াদের কাছে এমন ছুটি তাপপ্রবাহ বা রোদের চেয়েও বেশি নির্মম হয়ে উঠছে, এমনটাই মত শিক্ষকদের একাংশের। নদিয়া জেলার সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধানেরা জানাচ্ছেন, প্রতি বছর সময়ের অভাবে পড়ুয়াদের সম্পূর্ণ পাঠ্যক্রম স্কুলে শেষ করানো যায় না। অসম্পূর্ণ পাঠ্যসূচির ভিত্তিতেই পরীক্ষায় বসতে বাধ্য হচ্ছে পড়ুয়ারা। ফলে, শিক্ষার মানের চূড়ান্ত অবনমন ঘটছে বলে দাবি। যার প্রতিফলন ঘটেছে মাধ্যমিক বা উচ্চ
মাধ্যমিকের ফলাফলে।
মনোবিদেরা জানাচ্ছেন, ছুটির পর স্কুল খোলার একটি নির্দিষ্ট দিন বলা না থাকলে শিশুমনে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। লাগাতার ছুটি শিশু-কিশোর মনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, এতে পড়াশোনার অভ্যাস নষ্ট হয়ে ক্লাসে অনুপস্থিতি বাড়ে। অভারের পরিবারে বাড়ে স্কুলছুটের সংখ্যাও। পাশাপাশি, এই বছর থেকে নতুন পাঠ্যক্রমে, নতুন সিমেস্টার পদ্ধতিতে পঠনপাঠন চালু হয়েছে একাদশ শ্রেণিতে। ভাল করে বিষয়টি বোঝার আগেই লম্বা ছুটিতে চলে গিয়ে দিশাহারা একাদশের পড়ুয়ারা। অপরিকল্পিত এই ছুটির জের যে পড়ুয়াদের ভোগাতে চলেছে, এমনটাই মনে করছেন
বিদ্যালয় প্রধানেরা।