—প্রতীকী ছবি।
দশ মাসে তিন বার দলবদল!
জেলার রাজনীতিতে কার্যত নজির সৃষ্টি করলেন সুনীল পাল ওরফে কেষ্ট। সোমবার কলকাতায় বিজেপির রাজ্য কার্যালয়ে গিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো বিজেপিতে যোগ দিলেন তিনি। তৃণমূল নেতাদের প্রতি উগরে দিলেন একরাশ অভিমানও।
নদিয়ার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কেষ্ট পাল তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্য। এক সময়ে মুকুল রায়ের খুবই ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন তিনি। গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল তাঁকে টিকিট না দেওয়ায় মে মাস নাগাদ তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। মুকুল রায় তাঁকে কৃষ্ণনগরের বাড়ি থেকে বাজনা বাজাতে-বাজাতে জেলা বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে এসেছিলেন। সেখানেই তিনি বিজেপিতে যোগ দেন।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের ২৬ নম্বর আসনে কেষ্টকে বিজেপি প্রার্থী করার কথা ঠিকই হয়ে গিয়েছিল। সেই মতো দেওয়াল লেখা এবং ফ্লেক্স টাঙিয়ে পুরোদমে প্রচারও শুরু হয়ে যায়। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে তিনি আবার বিজেপি ছেড়ে পুরনো দলে ফিরে আসেন।
এর পরে কিন্তু তৃণমূলের ভিতরে বা বাইরে কেষ্ট পালকে তেমন সক্রিয় হতে দেখা যায় নি। দলের অন্দরের খবর, পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখে মুকুল-ঘনিষ্ঠ এই নেতাকে দলে ফেরানো হলেও জেলা নেতৃত্ব তাঁকে গুরুত্ব দিতে রাজি ছিলেন না। কার্যত তাঁকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছিল। পুরনো দলে যে তাঁর বিশেষ ভবিষ্যৎ নেই, তাঁকে যে সাইড বেঞ্চে বসিয়ে রাখা হবে, তা বুঝে যান কেষ্ট। ফলে নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বাঁচাতে বিজেপিতে ফেরা ছাড়া তাঁর সামনে রাস্তা বিশেষ খোলা ছিল না।
কেষ্ট-ঘনিষ্ঠদের দাবি, সেই কারণেই তিনি ফের বিজেপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি নেতারা তাঁর মতো সম্পন্ন প্রার্থীকে হাতছাড়া করতে চাননি।
দলের নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকার দাবি করেন, “সুনীল পাল যথেষ্ট জনপ্রিয় নেতা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে ভয় দেখিয়ে তাঁকে তৃণমূল ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তাঁর জন্য আমাদের দরজা সব সময়েই খোলা ছিল।”
বিজেপি না হয় লোকসভা ভোটের আগে শক্তিবৃদ্ধি করার জন্য কেষ্টকে দলে ফিরিয়ে নিল। কিন্তু তিনি কেন বারবার দলবদল করছেন? এতে কি তাঁর গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে এসে ঠেকছে না ? কেষ্টর দাবি, “আমি তো বিজেপিতেই থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের আগে আমার উপরে নানা রকম চাপ আসতে শুরু করে। আমার ব্যবসার ক্ষতি করে দেওয়া হবে হলেও হুমকি দেওয়া হতে থাকে। বাধ্য হয়েই আমায় তৃণমূলে ফিরতে হয়েছিল।”
কেষ্টর আক্ষেপ, “তৃণমূলে সাংগঠনিক পদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কিছুই না দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। বিজেপিতে ফিরে আসার সেটাও একটা কারণ।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত অবশ্য পাল্টা বলেন, “আমরা কাউকে দলে ফিরিয়ে নিইনি। এমন কত লোক আমাদের দলে আসা যাওয়া করে! সকলকে নিয়ে মাথা ঘামাই না। এ-ও তেমনই এক জন।”