কুস্তি শুরুর আগে একটু দোস্তি

যুযুধান দু’পক্ষ সম্মুখ সমরে। ভোট প্রচারে একে অপরকে লক্ষ করে সমানে চলছে বাক্যবাণ। কোথাও আবার ভোটারদের ভয় দেখাতে মাঝরাতে চলছে বোমাবাজি। শেষ হাসি কে হাসবে তা সময়ই বলবে। কিন্তু বুধবার মনোনয়নপত্র পেশ করার সময় সবকিছুকে ছাপিয়ে গেল সৌজন্যের রাজনীতি।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৬ ০১:৪৫
Share:

যুযুধান দু’পক্ষ সম্মুখ সমরে। ভোট প্রচারে একে অপরকে লক্ষ করে সমানে চলছে বাক্যবাণ। কোথাও আবার ভোটারদের ভয় দেখাতে মাঝরাতে চলছে বোমাবাজি। শেষ হাসি কে হাসবে তা সময়ই বলবে। কিন্তু বুধবার মনোনয়নপত্র পেশ করার সময় সবকিছুকে ছাপিয়ে গেল সৌজন্যের রাজনীতি।

Advertisement

কৃষ্ণনগর থেকে কল্যাণী, প্রচারে যাঁরা পরস্পরকে বিঁধছেন নানা অভিযোগে, সামনাসামনি পড়তেই তাঁরা কেউ জানতে চাইলেন, ‘‘খবর কী, কেমন আছেন?’’ কেউ আবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিদ্বন্দ্বীকে বলে গেলেন, ‘‘ভাল থাকবেন।’’ যা দেখে রাজনীতির আঙিনার বাইরের অনেককেও বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘এ তো বাইরে কুস্তি ভিতরে দোস্তি গো।’’ তবে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পুলিশ প্রশাসন সকলেই চাইছেন, এমন সৌজন্য বজায় থাকুক ভোটের ময়দানেও।

শুরুটা অবশ্য তেমন শান্তির আবহে হয়নি। রাত পোহালে সিপিএমের মনোনয়নপত্র পেশ। তার আগে মঙ্গলবার রাতে কল্যাণীর ‘বি’ ব্লকে বি-৫ খালধারে পর পর পাঁচটি বোমা পড়ে। বোমার আওয়াজে কেঁপে ওঠে এলাকা। এলাকার সাধারণ মানুষকে সন্ত্রস্ত করার জন্য তৃণমূলই বোমাবাজি করেছে বলে অভিযোগ তুলে মিছিল করে বামেরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে যায়। ‘এ’ ব্লকের সিপিএমের জোনাল পার্টি অফিস থেকে কংগ্রেস এবং সিপিএমের ওই বিশাল মিছিল দেখে মহকুমাশাসকের অফিসের এক প্রৌঢ় কর্মী তো বলেই ফেললেন, ‘‘মনে হচ্ছে এ বার লড়াই জমবে।’’

Advertisement

বেলা ১টা নগাদ সিপিএম প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র পেশ করার কথা ছিল। তার সামান্য কিছু পরে তাঁরা সেই কাজ শুরু করেন। বেলা দুটো নাগাদ কল্যাণীর মহকুমাশাসকের অফিসে আসার কথা ছিল তৃণমূলের চাকদহ কেন্দ্রের প্রার্থী রত্না ঘোষ করের। তিনিও এলেন নির্ধারিত সময়ের কিছু পরে। তখনও শেষ হয়নি সেই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী বিশ্বনাথ গুপ্তের মনোনয়নপত্র পেশ। পরপর তিনটি ঘরে চলছিল কল্যাণী, হরিণঘাটা, চাকদহ কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কাজ। ফলে নির্দিষ্ট ঘরের দরজার সামনেই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। ততক্ষণে শেষ হয়েছে কল্যাণীর সিপিএম প্রার্থী অলকেশ দাসের কাজ।

মহকুমাশাসকের ঘর থেকে বেরিয়েই তৃণমূল কর্মীদের ভিড়ের মধ্যে পড়েন অলকেশবাবু। তখন অন্য ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন রত্নাদেবী। তাঁকে দেখেই অলকেশবাবু বলেন, ‘‘এই যে ম্যাডাম, কেমন আছেন? খবর কী?’’ হাসিমুখে রত্নাদেবীর উত্তর, ‘‘ভাল। আপনি ভাল তো?’’ অলকেশবাবু এ বার বলেন, ‘‘ভোট ভোটের মতো হোক। আমরা ঠিক থাকলেই হল।’’ ‘‘ঠিকই বলেছেন।’’ মাথা নেড়ে সায় দেন রত্নাদেবী। বেরিয়ে যাওয়ার সময় অলকেশবাবু বলেন, ‘‘আমার শেষ হল। এ বার আপনাদের শুরু হোক।’’ রত্নাদেবীও বললেন, ‘‘ভাল থাকবেন।’’ কিন্তু অলকেশবাবুর শুরু-শেষের প্রসঙ্গ টেনে এক রসিক তৃণমূলকর্মী হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘‘কথাটা রত্নাদি বললে তো আপনারা অন্য মানে করে বসতেন!’’

সৌজন্যের শেষ সেখানেই থেমে থাকেনি। বিশ্বনাথবাবুর মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করছিলেন যাঁরা, তারা জানান, রত্নাদেবী বাইরে এসে অপেক্ষা করছেন। বিশ্বনাথবাবু সঙ্গে সঙ্গে বলেন, ‘‘ওঁকে প্লিজ ভিতরে এসে বসতে বলুন।’’ সরকারি আধিকারিকরা রত্নাদেবীকে ভিতরে এনে বসান। পাশাপশি চেয়ারে তখন, একই কেন্দ্রের দুই প্রতিপক্ষ। দু’জনে কুশল বিনিময় করেন। দু’জনকে কথা বলতেও দেখা যায়। একই সৌজন্য দেখিয়েছেন কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের কংগ্রেস এবং তৃণমূল প্রার্থী। গত বিধানসভা ভোটেও তাঁরা জোটে ছিলেন। এ বার তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বী। এই কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী অসীম সাহা মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বেরোচ্ছিলেন। সেই সময়ে ঘরে ঢোকেন তৃণমূল প্রার্থী অবনীমোহন জোয়ারদার। করমর্দন করে কুশল বিনিময় করেন তাঁরা। দু’জনেই বলেন, ‘‘ভোট ভোটের জায়গায় থাক। কিন্তু পারস্পরিক সৌজন্যটাও খুবই জরুরি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement