কিচেন-গার্ডেন: নিজস্ব চিত্র
লনের এক কোণে পড়ে ঝাঁটার কাঠি। বিরক্ত মুখে সেটা তুলে নিয়ে পাশে ডাস্টবিনে ফেলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী।
নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী নন। আইশমালি ইউনাইটেড একাডেমি (উচ্চ মাধ্যমিক) স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী পারমিতা দাস। লনেই তার দেখা হয়ে গেল পরিবেশ মন্ত্রী নবম শ্রেণির জহিরুল বিশ্বাসে সঙ্গে। কঠিন গলায় প্রধানমন্ত্রী বললেন, “ঝাঁটার কাঠি কুড়িয়ে পেয়েছি। চারদিকে আরও নজর দেওয়া উচিত।” পরিবেশ মন্ত্রী তড়িঘড়ি মাথা না়ড়লেন।
দিন তিনেক আগেই পারমিতার কাছে খবর এসেছে, অষ্টম শ্রেণির দুই ছাত্র নাকি খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়নি। “এটা মানা যায়? দেখি, এ বারের ক্যাবিনেট মিটিংয়ে কথাটা তুলতে হবে”— গজগজ করে পারমিতা। শুনে মাথা নাড়েন প্রধান শিক্ষক দেবাশিস মুখোপাধ্যায়।
বছর তিনেক হল, পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসেই গঠন করা হয়েছে ‘চাইল্ড ক্যাবিনেট’ বা শিশু সংসদ। তার পর নানা ক্লাসের পড়ুয়াদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘সেন্ট্রাল ক্যাবিনেট’ বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। মন্ত্রীরা যে যার দায়িত্ব সামলায়। যেমন সকলে মিড ডে মিল খেল কি না দেখা বা ‘কিচেন গার্ডেন’ রক্ষণাবেক্ষণ খাদ্যমন্ত্রীর কাজ।
প্রতি শনিবার ক্লাস শেষে পরিবেশ মন্ত্রী সকলকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ঝাঁটা হাতে। প্রতি বুধবার পড়ুয়াদের হাতের নখ পরীক্ষা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কারও পড়া বুঝতে সমস্যা হলে শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করার দায়িত্ব শিক্ষামন্ত্রীর। মাসের প্রথম সপ্তাহে সমস্ত ক্লাসের মুখ্যমন্ত্রী ও অন্য মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে বসে প্রধানমন্ত্রী। ঠিক করে নেওয়া হয় এ মাসের কর্মসূচি। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকেন।
এমন মন্ত্রিসভা চলছে আরও বহু স্কুলে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে বহরমপুর লাগোয়া হিকমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুলে শিশু সংসদে বিশেষ বৈঠক ডেকে খাদ্যমন্ত্রীকে অপসারণ করা হয়েছে সম্প্রতি। অপরাধ, কাউকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে সাত দিন স্কুল কামাই। খাদ্যমন্ত্রী অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সদ্ভাব না থাকাতেই এত কড়া ব্যবস্থা! প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে রেষারেষি লেগেই থাকে। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কাজের খুঁত ধরে বেড়ায়। লাভবান হয় স্কুল।’’
পাঁচগ্রামের ইন্দ্রাণী হাসনামায়ানি হাইস্কুলে পরিবেশ মন্ত্রীই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বাড়তি দায়িত্বও পালন করে। কিন্তু তার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর নখ বড় হয়ে গেলেও তাকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে বলে অন্য মন্ত্রীরা অভিযোগ করেছে প্রধান শিক্ষকের কাছে। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে নিজে কাজ না করে অন্যদের খাটিয়ে মারে। প্রধানমন্ত্রী বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে? এ রকম চলতে থাকলে অনাস্থা প্রস্তাব আনবে বলে হুমকি দিয়েছে কিছু মন্ত্রী।
আইশমালির মন্ত্রীরা অবশ্য কাজে বেশ দড়। তারা নিয়ম করেছে, প্রতি মাসে পড়ুয়ারা দেবে এক টাকা করে। সেই টাকায় শৌচাগার পরিষ্কার থেকে ফিনাইল, ঝাঁটা, ডাস্টবিন কেনার খরচ চলবে। স্কুল চত্বরে নজরদারি চালাতে মেয়েদের নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘ঝাঁসি বাহিনী’। কোনও ছাত্র বেচাল করলেই তারা মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী হয়ে শিক্ষকদের কানে তোলে। প্রধান শিক্ষক বলেন, “পড়ুয়ারা যে ভাবে নিজেদের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিচ্ছে, তাতে আমরাও অবাক হয়ে যাচ্ছি।”