এক শিক্ষককে পাল-পাল পড়ুয়া সামাল দেওয়া রাজ্যের বহু প্রাথমিক স্কুলেই চেনা ছবি। উঁচু স্কুলেও কি সেই ছবি একেবারে দেখা যায় না?
মুর্শিদাবাদের রানিনগর ১ ব্লক ইসবপুর জুনিয়র হাইস্কুলেই তো এক জন মোটে শিক্ষক। অফিসের কাজ থেকে মিড-ডে মিল, চারটি ক্লাস নেওয়া, সব কিছুই তাঁকে একা সামাল দিতে হয়। গত তিন বছর ধরে চারটি ক্লাসের ৮৬ জন পড়ুয়ার জন্য শিক্ষক প্রশান্ত মণ্ডলই এক মাত্র সম্বল। তিনি অসুস্থ হলে বা ছুটি নিলে স্কুল বন্ধ করা ছাড়া আর উপায় থাকে না।
নদিয়ার তেহট্ট অভয়নগর জুনিয়র হাইস্কুলে এক জনও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। গত দশ মাস ধরে সেখানে ৪টি শ্রেণিতে ১৯ জন পড়ুয়ার ক্লাস নিচ্ছেন একই ক্যাম্পাসে চলা অভয়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাহিন মণ্ডল। তিনি দৈবাৎ ছুটি নিলে পাশের প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সফিকুল ইসলামকে ক্লাস নিতে যেতে হয়। তিনি বলেন, “শিক্ষা দফতরের কথায় সহ-শিক্ষক দিয়ে স্কুল চালু করেছি। শিক্ষক না দিলে নতুন বছরে আর ছাত্রছাত্রী ভর্তি করতে পারব না।”
নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের জুনিয়র হাইস্কুল ও নিউ সেট-আপ আপার প্রাইমারি স্কুলের এই দু’টি উদাহরণ হিমশৈলের চূড়া মাত্র। দুই জেলায় এরকম বহু স্কুলে আছে, যেগুলি এক বা দু’জন শিক্ষকে চলছে।
ইসবপুর জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত মণ্ডলের কথায়, “এক জন অতিথি শিক্ষক ও আমি মিলে আগে স্কুল চালিয়েছি। গত তিন বছর একাই চালাচ্ছি।” তিনি জানান, এক সঙ্গে দু’টি শ্রেণির ক্লাস নেন তিনি। অন্য দু’টি শ্রেণির ক্লাস বন্ধ থাকে। হরেক রকম কাজ তো আছেই। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘বারবার শিক্ষক দেওয়ার জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু পাইনি।’’
মুর্শিদাবাদে প্রায় চারশো জুনিয়র হাইস্কুল এবং নিউ সেট-আপ আপার প্রাইমারি স্কুলের অনুমোদন রয়েছে। চালু আছে প্রায় ৩৩০টি। সেগুলিতে ন্যূনতম তিন জন করে শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু অধিকাংশ স্কুলেই তিন জনের কম শিক্ষক আছে। জেলায় ৬০টি স্কুলে এক জন করে এবং ৫৬টি স্কুলে দু’জন করে শিক্ষক আছে।
নদিয়াতেও আড়াইশো জুনিয়র হাইস্কুল এবং নিউ সেট-আপ আপার প্রাইমারি স্কুলের বেশির ভাগেই এক বা দু’জন করে শিক্ষক রয়েছে। জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ তারাননুন সুলতানা বলেন, “স্কুলগুলি অতিথি শিক্ষক দিয়ে চালানো হচ্ছে। তবে সরকারও এসএসসি-র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ শুরু করেছে। আশা করি, শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হবে।” মুর্শিদাবাদের জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পুরবী বিশ্বাস দে-ও কার্যত একই কথা বলেন। তবে অতিথি শিক্ষক পেতে সমস্যা হচ্ছে। নিয়ম মতো, ৬০-৬৪ বছরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা ওই সব স্কুলে অতিথি শিক্ষক হতে পারেন। সাম্মানিক কম হওয়ায় এবং স্কুল থেকে বাড়ি দূরে হওয়ায় এঁদের একটা বড় অংশই আগ্রহী হচ্ছেন না। হরিহরপাড়ার তরতিপুর জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু নাওসার ফারুখ বলেন, “আমরা অতিথি শিক্ষক চেয়েছিলাম। কেউ আসতে চাননি।” রাজ্য সরকার কবে শিক্ষক নিয়োগ করবে আর কবে সমস্যার শেষ হবে, তা অজানাই।