বহরমপুর পুরসভা.
ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ের বহরমপুর অবৈতনিক পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছে দেখা গেল চতুর্থ শ্রেণির ঘরে মাত্র দু’জন পড়ুয়া। বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ৫৮ জন। খাতায় কলমে শিক্ষক শিক্ষিকা তিন জন। বাকিরা পুরকর্মী। ওই এলাকার এক বাসিন্দা জানালেন, “শিক্ষকদের না দেখলে বোঝা যেত না, এখানে বিদ্যালয় বলে কিছু আছে।”
একই অবস্থা ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত গোরাবাজার অবৈতনিক পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। তিনটে চল্লিশে ছুটি। কিন্তু তার আগেই বিদ্যালয়ের প্রবেশপথে বড় তালা। বিদ্যালয় লাগোয়া এক বাড়ির বাসিন্দা খুরশিদ আলম জানালেন, “বিদ্যালয়ে ছাত্র থাকলে তো শিক্ষকরা থাকবেন। না থাকলে কে আর বেগার সময় কাটাবে বলুন।” পড়ুয়ার সংখ্যা সাকুল্যে পঁয়ত্রিশ জনের বেশি নয়। শিক্ষক কিন্তু কুড়ি জন। খাতায় কলমে শিক্ষক শিক্ষিকা জনা চারেক। বাকি পুরকর্মীরা শিশুশ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ুয়াদের লেখাপড়া শেখাতে আসেন। সৈদাবাদ অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ার সংখ্যা কমে তলানিতে ঠেকেছে। শিক্ষক আবুল হাসনাত বললেন, “সকাল বিকেল মিলিয়ে সংখ্যাটা শ’তিনেক হবে।” অথচ এক সময় সকাল ও দুপুর দু’টি অর্ধে বিদ্যালয় খোলা রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন তৎকালীন পুরসভা কর্তৃপক্ষ।
পুর এলাকায় বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া এলাকার নিরক্ষর মানুষদের স্বাক্ষর করার উদ্দেশ্যে ১৯২৭ সালে পাঁচটি অবৈতনিক পুর প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করা হয়েছিল। ওই বিদ্যালয়গুলির শ্রেণিকক্ষ থেকে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন বাবদ যাবতীয় খরচ বহরমপুর পুরসভা সেই সময় থেকে বহন করে আসছে। গোরাবাজার, বহরমপুর, খাগড়া, সৈদাবাদ, কাশিমবাজার এলাকায় একটি করে অবৈতনিক পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। খাগড়া অঞ্চলের ওই পৌর প্রাথমিকের একটি স্কুলবাড়িতে এখনও তিনশো ছাত্রছাত্রী পড়ে। কাশিমবাজারে পড়ুয়ার সংখ্যা খাতায় কলমে শতিনেক থাকলেও বিদ্যালয় সূত্রেই জানা যায় সেখানে স্কুলছুট ছাত্রের সংখ্যা বেশি। খাগড়া অবৈতনিক পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক উজ্জল বিশ্বাসের দাবি, “এই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনির ছাত্ররা শহরের অন্য উচ্চবিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি হতে পারে না। তাই অভিভাবকরা অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে বেশি আগ্রহী।” পুরকর্মচারীদের নেতা নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষাগত যোগ্যতার নিরিখেই শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে। রাজ্য শিক্ষা দপ্তর তাঁদের নিজেদের অধীনে নেওয়ার চেষ্টা করছে।’’ কিন্তু স্কুলগুলো টিকবে তো, সেই প্রশ্নই তুলছেন শিক্ষকরা।