শোকার্ত: মৃত গোলোকের পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র
সাত সকালে ছেলেটা পড়তে যাচ্ছিল পাশের গ্রামে। সাইকেলের গতিও এমন কিছু বেশি ছিল না। আচমকা রাস্তার পাশে ডাঁই করে রাখা গোবরে আটকে যায় সাইকেলের চাকা। ঠিক সেই সময়েই পিছন থেকে আসছিল একটি বাস। টাল সামলাতে না পেরে রাস্তার উপরেই পড়ে যায় নবম শ্রেণির ওই পড়ুয়া। বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় গোলোক কীর্তনিয়া (১৪)। তার বাড়ি মুরুটিয়ার দিঘলকান্দি গ্রামে।
বুধবার সকালে খানপুরে এ ঘটনার পরে ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা আড়াই ঘণ্টা মুরুটিয়া-মহিষবাথান রাস্তা অবরোধ করে। তাঁদের দাবি, রাস্তার পাশে এ ভাবে গোবর ফেলে রাখার কারণেই এমন দুর্ঘটনা। বার বার নিষেধ করার পরেও যিনি রাস্তার পাশে এ ভাবে গোবর ফেলে রেখেছেন তাঁকে গ্রেফতার করতে হবে। পুলিশ অবশ্য পরে অবরোধ তুলে দেয়। বাসটিকে আটক করা হলেও চালক পলাতক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোয়াবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই ছাত্র এ দিন খানপুরে বাংলা শিক্ষকের কাছে পড়তে যাচ্ছিল। শিক্ষকের বাড়ির একটু আগেই এমন দুর্ঘটনা। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ওই গোবর ফেলে রাখার কারণে এমন দুর্ঘটনা প্রথম নয়। বছর তিনেক আগে ওই একই জায়গায় গাড়ির চাপা পড়ে মারা গিয়েছিলেন রসিকপুরের এক মহিলা ও তাঁর ছেলে। গত ডিসেম্বরেও একই ভাবে গোবরে সাইকেল পিছলে পিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন রসিকপুরের আনারুল মণ্ডল নামে বছর ত্রিশের এক যুবক। অভিযোগ, এমন দুর্ঘটনার পরেও হুঁশ নেই পুলিশ ও প্রশাসনের।
গোলকের বাবা বাসুদেব কীর্তনিয়া বলছেন, ‘‘আগের তুলনায় রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা অনেক বেড়েছে। প্রতি দিনই বাড়ি থেকে গোলোক বেরোনোর সময় বলতাম—সাবধানে যাস। এ দিনও শুনেছি, ওর সাইকেলের গতি তেমন ছিল না। গোবরে আটকে গিয়েই ও রাস্তায় পড়ে যায়। আরও কতগুলো প্রাণ গেলে পুলিশ এর ব্যবস্থা নেবে।’’
দিঘলকান্দি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ইরাজুল মণ্ডল বলেন, “রাস্তার পাশে যাতে কেউ আবর্জনা না ফেলেন সে ব্যাপারে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বার বার মাইকে প্রচার করা হয়েছে। তারপরেও যে সে কথা অনেকেরই কানে যায়নি তা তো বুঝতেই পারছি। ফের প্রচার করা হবে। রাস্তা ও রাস্তার পাশের জায়গা কেউ নোংরা করে রাখলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’’ করিমপুর ২ বিডিও সত্যজিৎ কুমার এই দিন জানিয়েছেন, ওই রাস্তার পাশে যিনি গোবর ফেলে রেখেছেন তাঁর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যা শুনে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘দেখা যাক, প্রশাসনের কত মাসে বছর হয়।’’