জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল

উঁহু, কাজের সময় ফেসবুক নয়

রোগীকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার কথা। কিন্তু তা আর হচ্ছে কই। নার্সের দুই হাতই তো ব্যস্ত মোবাইলে। ঝড়ে বেগে আঙুল ছুঁয়ে যাচ্ছে মোবাইলের স্ক্রিন। চলছে হোয়াটস অ্যাপে বন্ধুর সঙ্গে বাক্য বিনিময়। ইঞ্জেকশনের কথা মনেই নেই তাঁর। অভিযোগ, এক দশা কমবেশি হাসপাতালের সব কর্মীরই। সে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী থেকে নার্স, ডাক্তার সকলেই। কেউ হোয়াটস অ্যাপে বন্ধুদের সঙ্গে গল্পে মজে তো কেউ ফেসবুকে স্টেটাস আপডেট।

Advertisement

বিমান হাজরা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৬ ০২:০৯
Share:

রোগীকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার কথা। কিন্তু তা আর হচ্ছে কই। নার্সের দুই হাতই তো ব্যস্ত মোবাইলে। ঝড়ে বেগে আঙুল ছুঁয়ে যাচ্ছে মোবাইলের স্ক্রিন। চলছে হোয়াটস অ্যাপে বন্ধুর সঙ্গে বাক্য বিনিময়। ইঞ্জেকশনের কথা মনেই নেই তাঁর।

Advertisement

অভিযোগ, এক দশা কমবেশি হাসপাতালের সব কর্মীরই। সে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী থেকে নার্স, ডাক্তার সকলেই। কেউ হোয়াটস অ্যাপে বন্ধুদের সঙ্গে গল্পে মজে তো কেউ ফেসবুকে স্টেটাস আপডেট। এমনই অভিযোগ উঠেছে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নির্দেশিকা জারি করেছেন হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডল। জানিয়ে দিয়েছেন, কাজের সময় কোনও ভাবেই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা যাবে না।

এ হেন নির্দেশিকা জারি হওয়ার পর বিতর্ক শুরু হতেও বিশেষ সময় লাগেনি। সুপারের এই নির্দেশকে কর্মীদের অধিকারে হস্তক্ষেপ বলেই মনে করছেন ওই হাসপাতালের শাসক দলের কর্মী সংগঠন। আবার সাধারণ কর্মীদের মতে, কাজের সময় কাজ করাটাই বাঞ্ছনীয়। সুপার সেটা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়ে কোন অন্যায়টা করেছেন? হাসপাতালে সুস্থ পরিষেবা ও কাজের পরিবেশ ফেরাতে সুপারের এই নিষেধ বিধিতে অন্যায়ের কিছু দেখছেন না মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ার দুই জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকই।

Advertisement

গত ২৩ মে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপারিনটেন্ডেন্ট শাশ্বত মণ্ডল হাসপাতালের কর্মীদের উদ্দেশে নির্দেশিকা জারি করেছেন। ওই নির্দেশিকায় স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে, তিনি জানতে পেরেছেন হাসপাতালের কিছু কর্মী তাঁদের কাজের সময় মোবাইলে হোয়াটস অ্যাপ ও ফেসবুক ব্যবহার করছেন। কাজের সময় মোবাইল ফোন শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজনে পরিবার ও অফিসের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই অফিসে কাজের সময় ফেসবুক ও হোয়াটস অ্যাপ আপডেটিংয়ের কাজ করা যাবে না। যদি অফিসের কোনও কর্মীকে হাসপাতালে কাজের সময় ফেসবুক ও হোয়াটস অ্যাপ করতে দেখা যায়, তা হলে ওই কর্মীর বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুপারের এই নির্দেশের কপি হাসপাতালের বিভিন্ন দফতরে কর্মী, চিকিৎসক ও নার্সদের কাছে শুধু পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে তা-ই নয়, এই লিখিত নির্দেশ যে তাঁরা হাতে পেয়েছেন এই মর্মে কর্মীদের স্বাক্ষরও করিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর সুপারের জারি করা এই নিষেধাজ্ঞা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন কর্মচারিরা।

এক চিকিৎসকের কথা, “সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ কারও বিরুদ্ধে থাকলে সুপার তাঁর বিরুদ্ধে শো-কজ করে ব্যবস্থা নিতেই পারেন। কিন্তু এই ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার তিনি আটকাতে পারেন না। হোয়াটস অ্যাপ এখন যোগাযোগের সব চেয়ে সহজ মাধ্যম। ফোন কলের থেকেও তা অনেক দ্রুততার সঙ্গে পাঠানো যায়। স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তা ব্যবহার করছেন। তা হলে তা সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে ব্যবহারে অসুবিধে কোথায়?

নার্সরা কেউই এই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে শাসক তৃণমূল কর্মচারি ফেডারেশনের মহকুমা সভাপতি বিমান চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “এই নির্দেশ কার্যত কর্মীদের অধিকারে হস্তক্ষেপ। সরকারি তরফে কোনও মোবাইল কর্মচারিরা পায় না। অথচ অনেক কর্মচারিকে বিভিন্ন অফিসার জরুরি নথিপত্র চেয়ে পাঠান। তা হাতছাড়া করা যায় না। তাই তা হোয়াটস অ্যাপে ছবি তুলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কর্মী সংগঠনের কাজেও তা ব্যবহার করি আমরা। তাই সুপারের এই নির্দেশ গুরুত্বহীন। কর্মীরা তাঁদের অধিকারে এই হস্তক্ষেপ মানবেন না।”

এই নির্দেশ জারি করেই ৮ জুন পর্যন্ত টানা ছুটিতে চলে গিয়েছেন সুপার। তিনি বলছেন, “আমি কারও কোনও অধিকারে হস্তক্ষেপ করিনি। হাসপাতালে রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য কাজ করবেন কর্মী, নার্স ও চিকিৎসকেরা। কারও কাজের ক্ষেত্রেই হোয়াটস অ্যাপ জরুরি নয়। ফেসবুক তো নয়ই। আমি অভিযোগ পেয়েছি বলেই এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে সতর্ক করে দিয়েছি।”

তাঁর কথায়, ‘‘হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে রোগীরা অপেক্ষা করে থাকবেন, আর মোবাইল নিয়ে কেউ হোয়াটস অ্যাপ ও ফেসবুকে মেতে থাকবেন, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। কাজের সময়ের বাইরে যতখুশি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপডেট করুন। কিন্তু কাজের সময়ে নয়। আমি এটাই বলেছি। এবং এটা মানতে হবে।’’ সুপার জানান, প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে আমি হোয়াটস অ্যাপ ব্যবহার করি সরকারি কাজের প্রয়োজনে। হাসপাতালের আর কারও ক্ষেত্রে সে প্রয়োজন নেই।

সুপারের এই নির্দেশিকা জারিতে অন্যায়ের কিছু দেখছেন না মুর্সিদাবাদের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভাশিস সাহা। তিনি বলেন, “বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া যোগাযোগের বড় মাধ্যম। সরকারের বহু প্রশাসনিক কর্তাই কাজের জন্য হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত। আমি নিজেও ৭/৮টি গ্রুপের সদস্য। বিভিন্ন জেলার সমস্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, রাজ্যের বিভিন্ন স্বাস্থ্য অধিকর্তা, জেলাশাসক প্রমুখের সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপে রয়েছি আমি। তবে সেটা প্রশাসনিক কাজে গতি আনার জন্য। সাধারণ কর্মী, চিকিৎসকদের সে দায়িত্ব থাকে না। হাসপাতালে কাজের সময় পরিষেবা দেওয়ার কাজ করবেন তাঁরা। সুপার তো সেই ভাল কাজটাই করতে চেয়েছেন। আমরা হোয়াটস অ্যাপে থাকলেও প্রশাসনিক কাজে ফেসবুক কখনই প্রয়োজন পড়ে না।”

নদিয়ার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস কুমার রায় মনে করেন সোশাল মিডিয়ার ব্যবহার তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাঁর কথা, “এটা সরকারি আদেশ নয়। কাজের পরিবেশের স্বার্থে ওই হাসপাতালের কর্মীদের ক্ষেত্রে নির্দেশ মাত্র। তা ছাড়া কাজের সময় কর্মীরা ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ করবেন কেন? সরকারি কাজটাই কর্মস্থলে প্রধান।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement