চেনা সীমান্তে অচেনা ব্যস্ততা!
বর্ডার রোডে ধরে একটু আগেই ছুটে গেল বেশ কয়েকটি গাড়ি। হাওয়ায় ধুলো মিলিয়ে যেতে না যেতেই ফের গাড়ির সারি।
লালগোলার বৃদ্ধ কামাল মণ্ডল বেশ ঘাবড়ে গিয়েই ছেলেকে জানতে চাইলেন, ‘‘বর্ডারে কী হল বল দিকি?’’
ছেলে পড়ছিল পাশের ঘরে। বেশ বিরক্ত হয়েই বলল, ‘‘কাল ২৬ জানুয়ারি। রিপাবলিক ডে। আর তুমি সব কিছুতেই এত ভয় পাও কেন?’’
ছেলে বলেছিল রিপাবলিক, কামালের কানে গেল পাবলিক। তার পরে আপন মনেই বিড়বিড় করতে শুরু করলেন, ‘‘আমরা তো সাধারণ পাবলিক। ভয় তো লাগেই। আর সেই প্রবাদটা ভুলে গেলি বাপ— সীমান্তে বাস, সমস্যা বারো মাস!’’
কথাটা কিন্তু কথার কথা নয়। সীমান্ত আগের থেকে অনেক বদলে গিয়েছে। আগের মতো চুরি, ডাকাতি, খুনও তেমন নেই। কিন্তু কাঁটাতার ও চরের বালির সঙ্গে ভয়টা কিন্তু এখনও আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে।
কাঁটাতার ও পদ্মার পাশ দিয়ে সর্পিল গতিতে ছুটে চলেছে সীমান্তরক্ষীদের রাস্তা। সেই রাস্তার পাশে বিঘের পর বিঘে খেত। মাঘের কুয়াশা ভেঙে বিওপি-তে (বর্ডার আউট পোস্ট) গিয়েই সীমান্তের অচেনা মেজাজটা ধরতে পেরেছিলেন রানিনগরের জহিরুদ্দিন মণ্ডল।
তিনি বলছেন, ‘‘সীমান্তের ওই খেতেই রোজ কাজে যাই। শুধু ভোটার কার্ডটা দেখালেই বিএসএফ আর কিছু বলে না। কিন্তু এ দিন ওরা আমাদের দেখেও যেন চিনতে পারল না। একের পর এক প্রশ্ন। পরে বুঝলাম, আজ তো প্রজাতন্ত্র দিবস। তাই বাবুদের সব কিছুতেই আজ এত কড়া নজর।’’
রানিনগর, জলঙ্গি, শেখপাড়া, সাগরপাড়া, বামনাবাদ, নির্মল চর— সীমান্ত ছুঁয়ে বেঁচে আছে সাদা-কালো এই জনপদগুলি। সেখানে বিএসএফের তোড়জোড় শুরু হলেই বুক কেঁপে ওঠে গ্রামের লোকজনের। তাঁরা ভাবেন, আবার কী হল!
স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবসের সময়েও সাধারণ নিয়মেই নজরদারি বাড়ে ভারত-বাংলাদেশের এই সীমান্তে। কাহারপাড়ার চাষি জসিমুদ্দিন মণ্ডল বলছেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে কর্তা, অভাবের সংসারে কখন যে স্বাধীনতা দিবস আসে আর কখন প্রজাতন্ত্র দিবস চলে যায় তা সব সময় মনে থাকে না। বর্ডারবাবুদের ব্যস্ততা দেখলে প্রথমে ভয় হয়, তার পরে বুঝতে পারি, আজ কোনও
বিশেষ দিন।’’
এ দিন জেলা জুড়ে ছিল পুলিশি তৎপরতাও। ডোমকলের এসডিপিও মাকসুদ হাসান বলছেন, ‘‘বৃহস্পতিবার থেকেই সীমান্তের গ্রামে নজরদারি বাড়িয়েছি। বিএসএফের সঙ্গেও সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। শুক্র ও শনিবার রাতে বিএসএফের সঙ্গে সীমান্তের বেশ কিছু স্পর্শকাতর এলাকায় যুগ্ম ভাবেও অভিযান চালানো হবে।’’