কুয়াশায় মেশে সুগন্ধী ধোঁয়া

গির্জার প্রার্থনা কক্ষে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। মোমবাতির মায়াবী আলো। অর্গানে ক্যারলের সুর। রঙিন আলো, ক্রিসমাস ট্রি, লালটুপি সান্তা আর কেকের পসরায় ঝলমলে বড়দিনের আগের রাতে যে কোন খ্রিস্টভক্তের বাড়িতে ঢুকলে চোখে পড়বে উঠোনের ঠিক মাঝখানে সাজানো সেই পাহাড়ি প্রেক্ষাপট।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌমিত্র সিকদার

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৫২
Share:

সাদা চাদরের মতো গাঢ় কুয়াশায় মোড়া শীতের রাত। কনকনে পাহাড়ি ঠান্ডার হাত থেকে রেহাই পেতে ভরসা পাহাড়ের গুহার ভিতরে এক গোশালা। সেখানে একদল মেষ পালক মেষ নিয়ে বিশ্রাম করছে। অন্যদিকে রয়েছে গরু এবং তার খাবার পাত্র। পাহাড়ি গোশালার গরুর সেই জাবপাত্রের ঠিক পাশেই সন্তান কোলে মা। বলে দিতে হয় না এই চিত্রকল্প মা মেরির কোলে শিশু যিশুর। সঙ্গে খুশিতে উদ্বেল জোসেফ। ওদিকে গুহার দ্বারপ্রান্তে অপেক্ষায় পূর্বদেশীয় পণ্ডিতের দল। আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র দেখে তাঁরা হাজির হয়েছেন মানবজাতির রাজাকে অভ্যর্থনা জানাতে। হাতে তাঁদের মূল্যবান উপহার।

Advertisement

গির্জার প্রার্থনা কক্ষে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। মোমবাতির মায়াবী আলো। অর্গানে ক্যারলের সুর। রঙিন আলো, ক্রিসমাস ট্রি, লালটুপি সান্তা আর কেকের পসরায় ঝলমলে বড়দিনের আগের রাতে যে কোন খ্রিস্টভক্তের বাড়িতে ঢুকলে চোখে পড়বে উঠোনের ঠিক মাঝখানে সাজানো সেই পাহাড়ি প্রেক্ষাপট।

গুহার বাইরে দিক নির্দেশক নক্ষত্রের উজ্জ্বল আলোয় গৃহস্থের উঠোন আলোময়। গোশালার সামনে পরিবারের সকলে নতজানু প্রার্থনা করছেন, ‘প্রভু যিশু তুমি আমাদের মধ্যে এসেছো, আমরা ধন্য। তোমায় স্বাগত জানাই’। শেষ ডিসেম্বরের ঘন কুয়াশার সঙ্গে সুগন্ধী ধূপ-ধুনোর গাঢ় ধোঁয়া মিলেমিশে সে এক অপার্থিব পরিবেশ। ২৪ ডিসেম্বর রাতে গির্জার প্রার্থনা সেরে কৃষ্ণনগর, রানাঘাট বা চাপড়ার খ্রিষ্টান পাড়ার বেশির ভাগ বাড়িতে এ ভাবেই সুসজ্জিত গোশালার সামনে বিশেষ প্রার্থনা বড়দিনের মূল সুরটি বেঁধে দেয়। ওই গোশালা বা ‘ক্রিভ’কে ঘিরে প্রতিটি খ্রিস্টভক্ত পরিবারে ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায় ডিসেম্বর পড়তে না পড়তেই। বড়দিনের ন’দিন আগে ১৬ ডিসেম্বর থেকে ‘নভেনার’ বিশেষ প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে প্রাক উৎসব প্রস্তুতি পর্বের সূচনা। একই সঙ্গে চলে গোশালা নির্মাণের তোড়জোড়।

Advertisement

কৃষ্ণনগরের প্রবীণ বাসিন্দা অ্যাগনেস লাহিড়ি জানান, কমবেশি সব বাড়িতেই গোশালা তৈরি হয়। তিনি বলেন, “২৫ ডিসেম্বর থেকে পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন ওই গোশালার সামনে প্রার্থনা করা হয়।” গোশালায় যিশু, মেরি, জোসেফ, মেষ, ইত্যদি মিলিয়ে চোদ্দটি করে মূর্তি থাকে। গোশালা তৈরির খরচ পাঁচ হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

গোশালা প্রতিবারেই সাজাতে হয় বলে মূর্তি বা অনান্য উপকরণ যত্ন করে রেখে দেওয়া হয়। ফাইবারের মূর্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়। দেখতেও সুন্দর। মাটির মূর্তি দিয়ে সাজালেও একটি গোশালা জন্য চার-পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। কৃষ্ণনগরে এই মূর্তির বিশেষজ্ঞ হলেন রোমান ক্যাথলিকপাড়া বা সংক্ষেপে আরসিপাড়ার মনোজিৎ মণ্ডল বা মাইকেল বিশ্বাসেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গোশালার মূর্তির চাহিদা বাড়ছে। বো-ব্যারাকের মতো না হলেও বড়দিনে বেগোপাড়া, মঙ্গলাপুকুর বা চাপড়া খ্রিস্টান পাড়ার আবেগের কেন্দ্রে থাকে ওই গোশালা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement