খেত থেকেই চলছে মাটি কাটা। নিজস্ব চিত্র
খেতের কাজ তেমন নেই। এ দিকে, স্ত্রীও আবদার করছিলেন বেশ কয়েক দিন ধরেই। যুগিন্দার ইসমাইল শেখ তাই স্ত্রীকে নিয়ে দিনকয়েকের জন্য বেড়াতে গিয়েছিলেন শ্বশুরবাড়ি।
বাড়ি ফিরে জমিতে গিয়েই তাঁর মাথায় হাত। এ কী হাল তাঁর পাশের জমির? ক’দিন আগেই তিনি দেখে গিয়েছেন, সেটা ছিল আস্ত খেত। হয়ে গিয়েছে পুকুর।
ক্ষুব্ধ ইসমাইল বলছেন, ‘‘কাণ্ডটা দেখেছেন কর্তা! আমার পাশের জমির মাটি কেটে বিক্রি করে দিল। অথচ আমাকে এক বার জানালো না পর্যন্ত। এ ভাবে কি কেউ ইচ্ছেমতো মাটি কাটতে পারে?’’
পাশের জমির মালিকের সঙ্গে কথা বলে ইসমাইল জানতে পারেন, জমি থেকে তেমন আয় হচ্ছিল না। তাই সেই জমির মালিক ভাল দামে জমির মাটি বিক্রি করে দিয়েছেন ইটভাটার মালিককে।
ইসমাইল বলছেন, ‘‘যা লোকসান হওয়ার সে তো আমার হল। পাশের জমির মালিক মাটি বেচে সহজেই কিছু কাঁচা টাকা হাতে পেয়ে গেলেন। কিন্তু আমার জমি তো শেষ হয়ে গেল। সেচ দিলেই জমির জল, মাটি সবই নেমে যাবে পাশের ওই নিচু জমিতে।’’
এ বার চলুন, পাশের জেলা নদিয়ার ছবিটাও এক বার দেখে নেওয়া যাক। কৃষ্ণনগরের ভাণ্ডারখোলা এলাকার একটি জমিতে গত বছরেও হাওয়ায় দুলেছে ধানের শিষ। লকলকিয়ে উঠেছে পাটের ডগা। সেই জমিই এ বছর দেখতে দেখতে পুকুর হয়ে গিয়েছে।
গ্রামের লোকজন সবই দেখেছেন। ক্ষোভে ফুঁসেছেন। কিন্তু প্রতিবাদ করার জো নেই। কে? স্থানীয় লোকজন বলছেন, ‘‘যারা মাটি কাটছে তারা শুধু বিপজ্জনকই নয়, প্রভাবশালী নেতাদের ঘনিষ্ঠও। ওদের সঙ্গে লড়াই করতে গেলে ভিটে-মাটি সবই যাবে।’’
কথাটা যে কথার কথা নয়, তা জানেন দুই জেলার অনেকেই। অভিযোগ, প্রশাসনের লোকজনও সব জানেন। ফলে সেখানে অভিযোগ জানিয়ে লাভ তো হয়ই না, উল্টে মাটি মাফিয়াদের হুমকি সহ্য করতে হয়। কখনও কখনও আবার প্রতিবাদ করতে গিয়ে কিংবা মাটি কাটায় বাধা দিতে গিয়ে পুলিশ ঝামেলায় ফেলছে তাঁদেরকেই।
সুতির ফরিদপুরের চাষি মৃত্যুঞ্জয় রায়ের অভিযোগ, চাষের জমির মাটি কেটে নিচ্ছে মাটি মাফিয়ারা। তারই প্রতিবাদ করে ২৩ ফেব্রুয়ারি মাটি বোঝাই ট্রাক্টর আটকে দেন এলাকার লোকজন। পরে চাষিদের উপর চড়াও হয় মাটি মাফিয়ারা। পুলিশ তাদের গ্রেফতচার না করে তিন জন চাষিকে গ্রেফতার করে!
(চলবে)