গিলেই চলেছে নদী। নাকাশিপাড়ার উদয়চন্দ্রপুরে সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
ভাঙন প্রতিরোধে বছর তিনেক আগে পাথর ও বালির বস্তা দিয়ে বাঁধানো হয়েছিল পাড়। কিন্তু ভাঙন আটকাবে কি, গত তিন বছরে পাথর ও বালির বস্তা নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। যার জেরে আতঙ্কিত ভাগীরথী লাগোয়া নাকাশিপাড়ার উদয়চন্দ্রপুর, চরকুর্মিমারি, ঝাউডাঙার বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, সারা বছরই পাড় ভাঙছে। তবে গত একমাসে ভেঙেছে বেশি। নদীগর্ভে চলে গিয়েছে চাষের জমি, বাড়ি-ঘর। তবে এখনই ব্যবস্থা না নিলে বড়সড় বিপদের মুখে পড়বে ওই গ্রামগুলি। একই ভাবে সংকটে পড়েছে কালীগঞ্জের মাটিয়ারিও।
সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র সঞ্জয়কুমার সিংহ জানান, ভাঙনের বিষয়টি তাঁরা নজরে রেখেছেন। ইতিমধ্যে ভাগীরথীতে ১২টি, জলঙ্গিতে ৫টি এবং চূর্ণিতে ২টি জায়গায় ভাঙনরোধের কাজ চলছে। এর জন্য প্রায় দেড়কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। তা ছাড়াও নাকাশিপাড়ার উদয়চন্দ্রপুর, চরকুর্মিপাড়া, ঝাউডাঙা-সহ মোট ৮টি কাজের টেন্ডার ডাকা হয়েছে। মাটিয়ারিতেও ভাঙন প্রতিরোধে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উদয়চন্দ্রপুরের বাসিন্দা রামপ্রসাদ রাহা বলেন, “বিঘা চারেক জমি নদী গর্ভে গিয়েছে। বছর তিনেক আগে এলাকায় বালির বস্তা ও পাথর দিয়ে নদীপাড় বাঁধা হয়। কিন্তু সেসব এখন ভাগীরথীর গর্ভে।’’ ওই এলাকার চাষি বাদল দে বলেন, ‘‘যাঁরা চাষের জমির উপর নির্ভরশীল ছিলেন তাঁদের অনেকেই এখন সব খুইয়ে নিঃস্ব।’’
স্থানীয় বাসিন্দা বাদল দে, রামপ্রসাদ রাহা, স্বপনকুমার দে বলেন, ‘‘এমনিতে সামান্য টেউ দিলে পাড় ভাঙে। তার উপরে গত দু’বছরে নিয়মিত ভাবে নদীতে বার্জ যাতয়াত করছে। বার্জের ঢেউ এসে নদীপাড়ে ধাক্কা মারছে। তার ফলে ভাঙন আরও বাড়ছে।’’
সেচ দফতরের এক আধিকারিকও একই কথা জানান। তাঁর দাবি, ‘‘এমনিতেই জেলায় ভাগীরথীর বিভিন্ন জায়গা ভাঙনপ্রবণ। বছর দুয়েক থেকে হলদিয়া থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত বার্জ চলছে। চার ফলেও পাড় ভাঙছে। গত বছর অক্টোবর মাসে বিষয়টি জেলা সেচদফতরের পক্ষ থেকে রাজ্য সেচদফতরে জানানো হয়েছে। এমনকি হলদিয়া থেকে বারাণসি পর্যন্ত পণ্যবাহি বার্জ চলাচল শুরু হয়ে গেলে এই নদীতে বার্জ আসার সংখ্যা বাড়বে। ফলে ভাঙনের পরিমাণ বাড়বে- এই আশঙ্কায় নদিয়া জেলার ২৩টি ভাঙন প্রবণ এলাকা পরিদর্শনের জন্য রাজ্যকে জেলা সেচদফতর চিঠিও দিয়েছে।
বার্জ চলাচলের জন্য ভাঙন বাড়ছে তা কি করে বুঝলো সেচদফতর? কোনও সমীক্ষা হয়েছে এর ওপরে? এর উত্তরে জেলা সেচ দফতরের এক আধিকারীক জানান,আমাদের দফতরের এর ওপরে সমীক্ষা করার পরিকাঠামো নেই। তবে বাসিন্দাদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। তার পরে রাজ্যকে বিষয়টি জানিয়েছি।
নদী বিশেষজ্ঞ কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা সুপ্রতিম কর্মকার। তিনি জানান “আমাদের দিকে নদীপাড়ে মাটির স্তরে প্রথমে থাকে পলি, তার পরে থাকে বালি। জল বাড়লে নদীপাড়ের বালিড় স্তরের জল ঢুকে যায়। জল নেমে যাওয়ার সময় নদীপাড়ের বালি ধুয়ে নিয়ে যায়। যার ফলে পাড়ের জমি ফাপা হয়ে ভাঙন দেখা দেয়।” তাঁর দাবী, বার্জ যাওয়ার কারনে নদীপাড়ের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় ভাঙনে সামান্য প্রভাব পড়তে পারে। তবে তিনি জানান বার্জ যাওয়ার ফলে নদীর পাড়ে জলেড় ঢেউ কতটা হচ্ছে, সেই ঢেউ গিয়ে নদীর পাড়ে কি পরিমাণ আঘাত করছে তা সমীক্ষা করে দেখা দরকার। তবে বোঝা যাবে বার্জ চলাচলের জন্য নদী ভাঙনে কতটা প্রভাব পড়ছে।