লেফট-রাইট। — নিজস্ব চিত্র
হয় জোট, নইলে ফোট! এই হল সার কথা।
জোটের হাওয়ায় গলাগলি করে দাঁড়িয়ে বাম-ডান। মুহূর্মুহূ স্লোগান উঠছে। নিজেদের জোটপ্রার্থীকে নিয়ে তাঁরা এসেছেন মনোনয়ন দেওয়াতে। কাজ মিটেও গিয়েছে।
খানিক বাদেই এসে হাজির আর এক বাম প্রার্থী। অন্য কেন্দ্রের। জোট হয়নি সেখানে। বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই। ধ্বনি উঠল— ইনকিলাব জিন্দাবাদ! ভিড়টা ভাগ হয়ে গেল। ‘বন্দে মাতরম’ পার্টি একটু তফাতে সরে দাঁড়াল। অ-জোট প্রার্থী ফিরে যেতেই আবার দুয়ে মিলে গজালি। আর অপেক্ষা— কখন জোটহীন কংগ্রেস প্রার্থী এসে পড়েন। তৎক্ষণাৎ ধ্বনি উঠবে— বন্দে মাতরম! আর ‘ইনকিলাব’ একটু তফাতে সরে দাঁড়াবে।
বুধবার সারা দিন এই ঢেউয়ের ওঠা-পড়ারই সাক্ষী রইল বহরমপুরে জেলা প্রশাসনের দফতর।
দুপুরে জোট-ধর্ম মেনে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য শ্বেতা চন্দ্র, বহরমপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক গণেশ সরকার, কাদাই লোকাল সম্পাদক ভাস্কর সেনগুপ্তরা চলে যান জেলা কংগ্রেসের কার্যালয়ে। উপলক্ষ, বহরমপুর কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী মনোজ চক্রবর্তীর মনোনয়ন জমা। জেলায় অন্তত আধ ডজন কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেস ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ হচ্ছে। কিন্তু বহরমপুর কেন্দ্রে জোটের পথ মসৃণ। বাম নেতাদের সঙ্গে মিছিল করে মনোজ দুপুর ১২টায় প্রশাসনিক ভবনে যান। সঙ্গে ছিলেন বহরমপুর টাউন কংগ্রেস সভাপতি অতীশ সিংহ এবং পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্যও।
মনোজের মনোনয়ন পর্ব শেষ হতেই বাম-কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়। একে-একে আরও কিছু প্রার্থী তখন মনোনয়ন জমা দিতে আসছেন। প্রশাসনিক ভবন প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে টুকটাক কথাবার্তা বলছিলেন শ্বেতা, গণেশরা। আচমকা হাজির হরিহরপাড়ার সিপিএম প্রার্থী, হাইস্কুলের শিক্ষক ইনসার আলি বিশ্বাস। দেখেই বদলে গেল বাম কর্মীদের চোখমুখ। খানিক আগে মনোজ চক্রবর্তীর সামনে ‘বন্দে মাতরম’ বলে গলা ফাটানো বাম কর্মীরা ‘ইনক্লাব জিন্দাবাদ’ ধুয়ো তুলে ইনসারের মিছিলে যোগ দিলেন। জোট হয়নি হরিহরপাড়ায়। তাই একটু আগেই বাম কর্মীদের পাশে বসে গল্পগুজব করা কংগ্রেস কর্মীরা সন্তর্পণে সরে পড়লেন।
ইনসার আলির পরে মনোনয়ন জমা দিতে এলেন নওদার আরএসপি প্রার্থী, মাদ্রাসার করণিক আব্দুল বারি মোল্লা। নওদাতেও জোট হয়নি। কংগ্রেসের আবু তাহের দাঁড়িয়েছেন। আব্দুল বারি আসতে ফের শুরু বাম স্লোগান। তারই মধ্যে চুপচাপ চত্বর ছাড়লেন কংগ্রেস সমর্থকেরা।
নিঃশব্দে মাপামাপিও হল কিছু।
অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক মনোজ চক্রবর্তীর সঙ্গে পাল্লা দিতে কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ময়দানে নামিয়েছে তৃণমূল। তাসাপার্টি সঙ্গে নিয়ে তিনি এসেছিলেন প্রশাসনিক ভবনে। মনোনয়ন দিতে মনোজ কনফারেন্স হলে ঢুকতেই সুজাতা মনোনয়ন জমা দিয়ে হল থেকে বেরিয়ে যান। দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে চোখাচোখি হলেও বাক্যালাপ হয়নি।
বহরমপুরে কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ভবনে আরও এক জন মনোনয়ন জমা দেন এ দিন। তিনি হরিহরপাড়ার বিজেপি প্রার্থী তুলসীপ্রসাদ শুকুল।
ঘরেও নহে, পারেও নহে, যে জন আছে মাঝখানে... তাকে নিয়ে কারই বা মাথাব্যথা?