School Teachers

শিক্ষকদের হাতেই তো প্রশ্ন, নম্বরও

স্কুলের শিক্ষকদের পড়ানো নিয়ে অভিভাবকেরা কার্যত দ্বিমত। তাঁদের একাংশের মতে, ছেলেমেয়েকে ভাল শিক্ষার জন্য সবাই নামী শিক্ষকের কাছে পাঠাবেন, এটাই স্বাভাবিক।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

করিমপুর শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৪১
Share:

প্রতীকী চিত্র

কিছু স্কুলে ক্লাসের সিলেবাস ঠিক মতো শেষ হয় না। তার উপরে অনেক অবিভাবকেরই বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গিয়েছে, টিউশন ছাড়া পরীক্ষায় ভাল নম্বর তোলা এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা অসম্ভব। তারই ফয়দা তুলছেন কিছু স্কুলশিক্ষক।

Advertisement

স্কুলের শিক্ষকদের পড়ানো নিয়ে অভিভাবকেরা কার্যত দ্বিমত। তাঁদের একাংশের মতে, ছেলেমেয়েকে ভাল শিক্ষার জন্য সবাই নামী শিক্ষকের কাছে পাঠাবেন, এটাই স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে প্রাইভেট টিউটর হিসাবে অনেকেরই পছন্দ স্কুলশিক্ষক। কারণ বোর্ডের খাতা দেখার পদ্ধতি বা প্রশ্ন সম্পর্কে বাইরের টিউটরের তুলনায় স্কুলের শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা বেশি। তাঁদের কাছে পড়লে ছেলেমেয়েরা অনেক বেশি ভাল শিখতে পারবে, পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাবে।

আবার অভিভাবকের আর একটি অং‌শের অভিযোগ, অনেক স্কুলে স্কুল শিক্ষকেরা ছাত্রছাত্রীদের নানা কৌশলে তাঁদের কাছেই টিউশন পড়তে বাধ্য করেন। ক্লাসের ইউনিট টেস্টের প্রশ্ন তৈরি করা কিংবা পরীক্ষার প্রজেক্টের নম্বর তাঁদের হাতে থাকে। এমনকি এখন অনেক স্কুলে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষার প্রশ্নও স্কুল শিক্ষকেরা করেন। ফলে টিউশনের জন্য তাঁদের উপরে ভরসা করতে হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ের কয়েক জন স্কুলশিক্ষক এক সঙ্গে এমন ভাবে তাঁদের টিউশন পড়ানোর রুটিন তৈরি করেন যাতে কোনও ছাত্র বা ছাত্রী তাঁদের ছাড়া অন্য গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ার সময় বা সুযোগ না পায়।

Advertisement

তবে স্কুলশিক্ষকদের দাবি, এমন অভিযোগ মোটেই সত্যি নয়। ছাত্রছাত্রীদের চাহিদা আছে বলেই তাঁরা টিউশন দেন। স্কুলের পরীক্ষার সঙ্গে তার কোনও সম্পর্কই নেই। এ প্রসঙ্গে স্কুলশিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, সকলেই স্কুলের বাইরে টিউশন পড়ান না। স্কুলশিক্ষকদের মধ্যে হয়তো মাত্র পাঁচ শতাংশ শিক্ষক প্রাইভেট টিউশন করেন অথচ সব শিক্ষককেই এর জন্য নানা কথা শুনতে হয়। এ ব্যাপারে সরকারের আরও কঠোর পদক্ষেপ করা দরকার। যদিও ছাত্রছাত্রীরা কোথায় টিউশন পড়বে, এ ব্যাপারে ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের স্বাধীনতা থাকা উচিত বলে অনেকেই মনে করছেন।

ফলে প্রশ্ন উঠছে, একটা সরকারি স্কুলে পড়ার পরেও ছাত্রছাত্রীদের এত টিউশন-নির্ভর হতে হচ্ছে কেন? স্কুলে কি তাহলে ছাত্রছাত্রীদের ঠিক মতো পড়ানো হয় না? পড়াশোনা করানোর জন্য অভিভাবকেরা ছেলে বা মেয়েকে সরকারি স্কুলে পাঠাচ্ছেন। সেখানে সারা বছরে মাথাপিছু খরচ হয় মাত্র কয়েকশো টাকা। অথচ বাইরে টিউশন পড়াতে তাঁদের বছরে প্রায় বিশ-তিরিশ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। তা হলে কি শুধু মাত্র একটা সরকারি রেজিস্ট্রেশনের জন্যই ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি করা প্রয়োজন?

যে গৃহশিক্ষকেরা কোনও স্কুলের সঙ্গে যুক্ত নন, তাঁদের সংগঠন প্রাইভেট টিউটর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের করিমপুর এলাকার সভাপতি রাহুল মণ্ডল জানান, যাঁরা প্রচুর ছাত্রছাত্রী পড়ান, সেই সব স্কুল শিক্ষকদের নামের তালিকা আগেও প্রধান শিক্ষকদের দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বার শিক্ষা দফতরের বিভিন্ন আধিকারিকদের জানানো হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, “এখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই গৃহশিক্ষকতা করেন এবং কয়েক জন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকও জড়িত। আমরা কোনও ছাত্রের ক্ষতি চাই না। স্কুলশিক্ষকদের সঙ্গেও সংঘাত চাই না। কিন্তু শিক্ষকেরা সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলুন। তা না-হলে সংগঠনের পক্ষ থেকে সকলের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement