বেআইনি ভাবে স্কুলের জমিতে দোকান ঘর তৈরি করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির অভিযোগ উঠল দিগনগর হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে অভিযোগ উঠছে টাকা নয়ছয়েরও। বিষয়টি সামনে আসার পরে তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিললে স্কুল কর্তৃপক্ষকে শো-কজ করাও নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক।
মাস কয়েক আগে থেকে কোতোয়ালি থানার দিগনগর বাজার এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে এই স্কুলের সামনের জমিতে দোকান ঘর গজিয়ে উঠতে শুরু করে। পরে দেখা যায়, মোটা টাকার বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের ওই দোকান বিক্রি করা হচ্ছে। এলাকার লোকজন প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। তারপরই নড়ে বসে জেলা প্রশাসন।
সম্প্রতি জেলাশাসকের নির্দেশে স্কুলে গিয়ে তদন্ত করে আসেন জেলার স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) মিতালী দত্ত ও সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দুই আধিকারিকের কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পরে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা। তিনি বলেন, “ওই সম্পত্তি স্কুলের নয়। শিক্ষা দফতরের। স্কুল কোনও ভাবেই সেই জমিতে দোকান বানিয়ে বিক্রি করতে পারে না।” তাঁর কথায়, “বিদ্যালয় পরিদর্শককে প্রধান শিক্ষককে শো-কজ করতে বলা হয়েছে। কোনও ভাবেই দোকান বিক্রি করতে পারবে না স্কুল কর্তৃপক্ষ।”
যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এর মধ্যে কোনও অন্যায় খুঁজে পাচ্ছেন না। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নবকুমার গোস্বামী বলেন, “জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য কিছু দোকান ভেঙে দেওয়া হবে। সেই দোকানের মালিকেরা আমাদের কাছে এসেছিলেন। তাঁরা স্কুলের জায়গায় ঘর তৈরি করে দিতে অনুরোধ করেন। আমরা তাদের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” তিনি বলেন, “পরিচালন সমিতির বৈঠকে প্রস্তাব করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে টাকাপয়সার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। সেটা দেখছেন পরিচালন সমিতির সভাপতি।” পরিচালন সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ৯টি দোকান ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হবে। ভাড়া নেওয়া হবে মাসে শ’দুয়েক টাকা।
কিন্তু বাস্তবে চলছে অন্য খেলা। এমনটাই অভিযোগ।
ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র তথা কৃষ্ণনগর আদালতের আইনজীবী বিপ্লব বিশ্বাস বলেন, “সম্পুর্ণ অবৈধ ভাবে দোকান ঘর নির্মাণ করে তা বিক্রি করা হচ্ছে। ৬ থেকে ৮ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দোকান বিক্রি করা হচ্ছে। ওই টাকার কোনও হিসেব নেই স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে। আমরা কয়েক দিনের মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করতে চলেছি।”
পরিচালন সমিতির সভাপতি বিপ্লব বিশ্বাস স্থানীয় তৃণমূল নেতা। তিনি বলেন, “আমি টাকা নিইনি। দোকানদারেরা নিজের টাকায় দোকান করছেন।’’ কিন্তু দোকানদারেরা বিপ্লববাবুর সুরে কথা বলছেন না। প্রকাশ দেবনাথ জানান, তিনি দোকান কিনেছেন ৬ লক্ষ টাকায়। ইতিমধ্যে তিনি তিন লক্ষ টাকা দিয়েছেন। আর এক দোকানদার মন্টু দেবনাথ জানান, তিনি ৪ লক্ষ টাকা দিয়ে দোকান কিনেছেন। ওঁদের দাবি, টাকা দেওয়া হয়েছে বিপ্লব বিশ্বাসকে। আর এর সবটাই জানেন প্রধান শিক্ষক।