মাঝপথেই দেওয়া হল ছুটি

স্কুলে বসল ভোজবাড়ি

মঙ্গলবার চার পিরিয়ডের পরেই স্কুলে ছুটি দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক সুবীর মুখোপাধ্যায়। গয়েশপুর নেতাজি বিদ্যামন্দির ফর বয়েজ। মঙ্গলবার। ফাঁকা একটি ক্লাসঘরে ছড়িয়ে হয়েছে ভোজের আয়োজন। হাইবেঞ্চে রাখা সরু চালের ধোঁয়া ওঠা ভাত, সোনামুগের ডাল, আলু-পটলের তরকারি, চিকেন কষা। দই-মিষ্টি-পাঁপড়। গেটের বাইরে তখন দাঁড়িয়ে বেশ কিছু ক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রী।

Advertisement

মনিরুল শেখ

কল্যাণী শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৮ ০১:০৬
Share:

সেই বিজ্ঞপ্তি। নিজস্ব চিত্র

নোটিসটা দেওয়া হয়েছিল কয়েক দিন আগেই।

Advertisement

শিক্ষকদের বসার ঘরের ব্ল্যাক বোর্ডে এখনও জ্বলজ্বল করছে সেই নোটিস— ‘‘আগামী ২৪/০৭/১৮ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুদীপ্ত সিংহ রায় মহাশয়ের সৌজন্যে অসামান্য ভোজের আয়োজন করা হয়েছে। আপনাদের সকলের উপস্থিতি একান্ত ভাবে কাম্য।’’

যেমন বিজ্ঞপ্তি, তেমনই কাজ। মঙ্গলবার চার পিরিয়ডের পরেই স্কুলে ছুটি দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক সুবীর মুখোপাধ্যায়। গয়েশপুর নেতাজি বিদ্যামন্দির ফর বয়েজ। মঙ্গলবার। ফাঁকা একটি ক্লাসঘরে ছড়িয়ে হয়েছে ভোজের আয়োজন। হাইবেঞ্চে রাখা সরু চালের ধোঁয়া ওঠা ভাত, সোনামুগের ডাল, আলু-পটলের তরকারি, চিকেন কষা। দই-মিষ্টি-পাঁপড়। গেটের বাইরে তখন দাঁড়িয়ে বেশ কিছু ক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রী।

Advertisement

স্কুল সূত্রের খবর, চার পিরিয়ড শেষ হতেই ক্লাসে-ক্লাসে গিয়ে শিক্ষকেরা জানিয়ে দেন, আজ আর ক্লাস হবে না। পড়ুয়ারা স্কুল ছেড়ে চলে যায়। সপ্তাহের শুরুর দিকে এ ভাবে ক্লাস বন্ধ করে দেওয়ায় পড়ুয়া এমনকি শিক্ষকদেরও একাংশ ক্ষুব্ধ। বিকেল পর্যন্ত স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বেশ কিছু পড়ুয়া। একাদশ শ্রেণির তানিয়া দেবনাথ বলে, ‘‘এখন স্কুলে ইউনিট টেস্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন চালু হয়ে গিয়েছে। কয়েক মাস অন্তর পরীক্ষা নেওয়া হয়। এমন সব কারণে ক্লাস বন্ধ করে দিলে আখেরে তো সিলেবাসই শেষ হবে না।’’

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুবীর মুখোপাধ্যায় অবশ্য নিজের ঘরে বসে দাবি করেন, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি থাকায় ছুটি দেওয়া হয়েছিল। স্কুলের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য প্রদীপকুমার মণ্ডল যোগ করেন, ‘‘আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের কল খারাপ। বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে জানিয়েছিলাম। ছাত্রদের জলকষ্টের কথা ভেবেই তিনি ছুটি দিয়েছেন।’’ প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘সেটা একটা কারণ। আর এই ফাঁকে আমাদের খাওয়া-দাওয়াও সেরে ফেরা গেল। যতই হোক, ইংরেজির শিক্ষক সুদীপ্তবাবু স্কলারশিপ পেয়েছেন। তাই এ দিনই সিদ্ধান্ত নিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলা হল।’’

স্কুলেরই বেশ কয়েক জন সহ-শিক্ষক অবশ্য প্রকাশ্যেই বলছেন, অনেক দিন ধরেই ভোজের পরিকল্পনা ছিল। তাই বোর্ডের লেখায় ‘আগামী’ শব্দটা উল্লেখ করা হয়েছে। এ দিন সকালে লেখা হলে ‘আজ’ শব্দটা থাকত। স্কুলের একটি কল বিকল থাকলেও একাধিক ট্যাপ দিব্যি সচল রয়েছে। এক সহ-শিক্ষক বলেন, ‘‘এই জল আমরাও খাই। পিকনিকের মুডে খাওয়া-দাওয়ার জন্যই ছাত্রদের ক্ষতি করে স্কুল ছুটি দেওয়া হয়েছে।’’

জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, ক্লাস বন্ধ রেখে কোনও কর্মসূচি পালন করা যায় না। বিষয়টি কানে এসেছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement