সরস্বতীর প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পী। রানাঘাটে। ছবি: প্রণব দেবনাথ।
গত বছর কালী ও জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রায় করোনার কারণে সাঙ (বাঁশের মাচা) ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। সাঙ নিয়ে অনেক বিতর্ক, প্রতিবাদও হয়েছিল।
এখন করোনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। ফলে অনেকেই ভেবেছিলেন, এ বছর সরস্বতী পুজোর শোভাযাত্রায় অন্তত সাঙ বের করা যাবে। সেই মত প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছিল বিভিন্ন পুজোকমিটি। কিন্তু এ বারও প্রশাসনের তরফে পুজো কমিটিগুলিকে ডেকে জানিয়ে দেওয়া হল যে, সরস্বতী পুজোতেও কোনও ভাবেই সাঙ বের করা যাবে না। এতে হতাশ কৃষ্ণনগর শহরের তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ।
গত বছর দুর্গা ও কালীপুজোয় প্রশাসনের সব রকম বিধিনিষেধ ও নির্দেশিকা মেনে নিলেও জগদ্ধাত্রী পুজোয় একাধিক বারোয়ারি কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করে। যা নিয়ে একেবারে শেষ দিন পর্যন্ত পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে তাদের টানাপোড়েন চলে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ-প্রশাসন নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে এবং পিছিয়ে আসতে হয় বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলিকে। জগদ্ধাত্রী পুজোয় প্রধান আকর্ষণ সাঙ বাদ দিয়েই শোভাযাত্রা করেন কৃষ্ণনাগরিকেকরা।
অনেকেই ভেবেছিলেন, সাঙের আশা এ বার সরস্বতী পুজোয় পূরণ করবেন। তাঁরা হতাশ। তাঁদের কথায়, আগের না-হয় করোনার প্রকোপ ছিল। এখন তো সে সব নেই। বইমেলা থেকে শুরু করে নানা অনুষ্ঠান, সভা, মিছিল-মিটিং, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবই হচ্ছে। তা হলে সাঙের বেলায় আপত্তি কেন? কৃষ্ণনগরের অন্যতম বড় একটি পুজো কমিটির সভাপতি অনিন্দ্য রায় বলছেন, “করোনা কি একমাত্র সাঙের মাধ্যমে ছড়ায়? রাজনৈতিক সভা-মিছিলে ছড়ায় না বুঝি? আমরা সাঙের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। সকলেই সেটা চাইছেন।’’ কিন্তু প্রশাসন যদি অনুমতি না দেয়? তাঁর উত্তর, “সে ক্ষেত্রে সকলে মিলে আলোচনা করে সিদ্ধন্ত নেব।”
শহরের আর একটি পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা দেবব্রত মালাকার বলছেন, “আমরা সাঙের জন্য প্রস্তুত। করোনা তো এখন নেই বললেই চলে। শহরের মানুষের কথা ভেবে এ বার অন্তত সাঙ বারণ করা উচিৎ বলে আমরা মনে করি না। তবে প্রশাসন বারণ করলে শুনতেই হবে। উপায় নেই।”
জগদ্ধাত্রী পুজোয় সাঙ বের না হওয়ার সিদ্ধান্তের পিছনে অন্যতম ভূমিকা ছিল কৃষ্ণনগর পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা অন্যতম প্রশাসক অসীম সাহা-র। তিনি বলছেন, “মনে রাখতে হবে, করোনা নির্মূল হয়নি। যে কোনও মুহূর্তে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের ঢেউ আসতে পারে। তাই এখনও সতর্ক থাকতে হবে।“ তাঁর বক্তব্য, “এমনিতেই আমরা সাঙ হোক সেটা চাই না। আর অতিমারির সময়ে তো প্রশ্নই ওঠে না।’’ কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষের কথায়, “করোনা এখনও নির্মূল হয় নি। তাই সমস্ত দিক বিচার করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”