সাগরদিঘির বালিয়ায়। — নিজস্ব চিত্র
হঠাৎই যেন ঝাঁঝ কমে গিয়েছে লঙ্কা বাজারে।
তা বলে, খুচরো বাজারে নয়। সেখানে এখনও ৩০ টাকা কেজি। নিদেনপক্ষে, ২৫ টাকা। কিন্তু চাষিরা প্রায় কিছুই ঘরে তুলতে পারছেন না। পাইকারি বাজারে দাম নেমে এসেছে ১০-১২ টাকা কেজিতে। খেত থেকে লঙ্কা তুলে আড়তে নিয়ে যাওয়ার খরচই অন্তত ৮ টাকা। চাষের খরচ না হয় বাদই দেওয়া গেল।
যেখান থেকে লঙ্কা সারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে, সেই বেলডাঙাতেও এক অবস্থা। সেখানকার চাষি সামসুল শেখ বলেন, ‘‘গত বছর তেমন ফলন হয়নি। ফলে চাষিরা দাম পাননি। এ বার ফলন হয়েছে। আগে এই লঙ্কাই ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন ১০ টাকায় নেমে গিয়েছে।’’
নদিয়ার করিমপুর, তেহট্ট, চাপড়া এলাকায় লঙ্কা চাষ বেশি হয়। চাষিরা জানাচ্ছেন, পাইকারেরা ১৫-১৬ টাকা কেজি দরে খুচরো ব্যবসায়ীদের বিক্রি করছেন। সেটাই খুচরো বাজারে ৩০ টাকায় পৌঁছচ্ছে। কেন এতটা ফারাক?
লঙ্কা কারবারিদের ব্যাখ্যা, লোকে সাধারণত বাজারে এসে ৫০-১০০ গ্রাম লঙ্কা কেনে। অনেক জনকে একটু করে বিক্রি করতে গিয়ে বেশি চলে যায়। রাজাপুরের পাইকারি ব্যবসায়ী রামানন্দ বিশ্বাসের মতে, “৯ কেজি লঙ্কা খুচরো বিক্রি করলে ১০ কেজি চলে যায়। তা ছাড়া, পাঁচ কেজি লঙ্কা বিক্রি করতেই বেশ কয়েক দিন লেগে যায়। তার মধ্যে কিছু লঙ্কা নষ্ট হয়ে যায়। খুচরো ব্যবসায়ীরা খানিক বেশি দাম না নিলে লোকসান হবে।”
চাষিরা দাম পাচ্ছেন না কেন?
লঙ্কা চাষের মরসুম শেষ হওয়ার আগেই সাগরদিঘিতে জমি থেকে গাছ উপড়ে ফেলছেন বহু চাষিই। স্থানীয় চাষি অরবিন্দ দাস জানান, গত শ্রাবণে ৭০ টাকা কেজিতে লঙ্কা বিক্রি করেছিলেন তাঁরা। এখন দাম নেমে যাওয়ায় গাছ উপড়ে কপি বুনেছেন।
তবে লঙ্কা থেকে যে লাভ হওয়ার কথা ছিল, তা দাম পড়ে যাওয়ার আগেই পেয়ে গিয়েছেন বেশির ভাগ চাষি। নওদার সুজয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘আষাঢ়ে লাগানো লঙ্কা এখন প্রায় নেই। এখন হাইব্রিড লঙ্কা। ঝাঁঝ-গন্ধ কম। বেশি দাম পাওয়া যায় না। তা-ও যা দাম মিলছে তাতে সব খরচ ধরে কিছু টাকা হাতে থাকছে।’’
দুই জেলারই উদ্যানপালন দফতর জানাচ্ছে, গত বার ফলন কম
হলেও এ বার স্বাভাবিক হয়েছে। অতিফলন হয়নি। রানিনগর-২ ব্লক উপ-কৃষি আধিকারিক মিঠুন সাহা বলেন, ‘‘এ বছর মাঝারি ও উঁচু জমিতে অনেকে ধানের বদলে লঙ্কা চাষ করেছেন। ভাল ফলন হয়েছে। কিন্তু নোট কাণ্ডে ব্যবসায়ীরা বাইরে লঙ্কা পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। তাই দাম পড়ে গিয়েছে।’’ সাগরদিঘির চাষি প্রশান্ত ভট্টাচার্যের আক্ষেপ, হিমঘরে সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে চাষিরা লাভবান হতেন।