ক্ষোভ। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
একশো দিনের কাজ-সহ বিভিন্ন বিষয়ে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠল করিমপুর ২ ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত নন্দনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। গত দু’বছরে এই পঞ্চায়েত থেকে বহু গরিব মানুষ একশো দিনের কাজ, বার্ধক্য ভাতা, আবাস যোজনার ঘর পাননি, আবার অনেকে কাজ করেও সেই কাজের টাকা পাননি বলে অভিযোগ।
গোপালপুরের বাসিন্দা বৃদ্ধ সমর মণ্ডলের অভিযোগ, জবকার্ড থাকা সত্ত্বেও এক দিনও একশো দিনের কাজ পাননি। নৃপেন বিশ্বাসের অভিযোগ, “দুই বারে ৪২ দিন একশো দিনের কাজ করেছি অথচ এত দিন পরেও একটা টাকা পাইনি। কিন্তু শাসক দলের লোকজন যারা কাজ করেনি তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে যাচ্ছে।“
ন্যায্য পাওনার দাবি জানাতে বৃহস্পতিবার গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে এসেছিলেন আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ। তাঁদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব ইনসান বেওয়া, প্রমীলা রায়েরা অভিযোগ করেন, “নিজেদের লোক ছাড়া হাজার হাজার মানুষকে এক দিনও কাজ দেয়নি পঞ্চায়েত। এখন লকডাউনের জন্য প্রতিদিন খাবার জোটে না। একশো দিনের কাজ বড় ভরসা। যাদের পাকা বাড়ি আছে, সংসারে অভাব নেই, তারা কাজ না করলেও তাদের নামে টাকা আসছে।“
২৬ বছর আগে স্বামী মারা গিয়েছেন গোলাপি ঢালির। নিজের বয়স ষাট পেরিয়ে গিয়েছে। ভাঙা বাড়িতে থাকেন। তাঁর অভিযোগ, “যাদের নিজস্ব জমি-জায়গা আছে, ঘর আছে তারাই ঘর পাচ্ছে, কাজ না করেও টাকা পাচ্ছে। সরকারের কেউ এ সব দেখতে পায় না।” ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের কিশোরপুর গ্রামের বিজেপি সদস্য চন্দনা প্রামানিকের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের মোট ২৪ সদস্যের মধ্যে সাত জন তাঁদের দলের। তাঁদের এলাকায় কোনও কাজ করতে দিচ্ছে না তৃণমূল শাসিত পঞ্চায়েত। ফলে সাধারণ মানুষ সরকারি সুবিধা বা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। রাস্তার কাজ, একশো দিনের কাজ এমনকি ওই সব বুথের কোনও সাধারন গরিব মানুষকে সরকারি ঘর, বিধবা বা বার্ধক্য ভাতার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে বারবার বলেও কোন কাজ হয়নি।
আর এক বিজেপি সদস্য দীপেন্দ্রনাথ রায় অভিযোগ করেন, “পঞ্চায়েতের কর আদায়কারি প্রশান্ত বিশ্বাস ও কৃষ্ণকমল বিশ্বাস নিজের নামে, স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে একশো দিনের হাজার-হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন। তা-ও তাঁদের নিজের বুথে নয়, বাড়ি থেকে প্রায় আট-নয় কিলোমিটার দূরের সংসদে কাজ করেছেন বলে মাস্টার রোলে দেখানো হয়েছে। মাটি কাটা যন্ত্রে মাটি কেটেও একশো দিনের কাজে দেখিয়ে নিজেদের লোকজনকে টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।”
তৃণমূলের পূর্ণেন্দুবিকাশ বিশ্বাসকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তেহট্টের মহকুমাশাসক অনীশ দাশগুপ্ত বলেন, “ওই পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ওঠা মানুষের অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”