প্রতীকী ছবি।
অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে টুম্পা খাতুন (২৪) নামে এক তরুণীর। শনিবার দুপুরে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে মারা যান ওই তরুণী। খবর পেয়ে ওই তরুণীর পরিবার হাসপাতাল চত্বরে এসে পৌঁছয়। সেখানেই ওই তরুণীর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মধ্যে ধুন্ধুমার বেধে যায়। দু’পক্ষ মারপিটে জড়িয়ে পড়েন। খবর পেয়ে কান্দি থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়। তবে ওই ঘটনায় ভরতপুর থানায় স্বামী ও শাশুড়ি-সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে
টুম্পার পরিবারের দাবি, কীটনাশক খাইয়ে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। পাল্টা দাবি জানিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানান, টুম্পা কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। ওই চাপানউতোরে দু’পক্ষের মধ্যে বিবাদ বাধে। তুমুল মারপিট শুরু হয়ে যায় কান্দি মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে। তবে পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ছ’বছর আগে বীরভূম জেলার নানুর থানার নতুনগ্রামের টুম্পা খাতুনের সঙ্গে ভরতপুর থানার বিন্দারপুর গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ শেখের বিয়ে হয়েছিল। ফিরোজ পেশায় সুরাতের একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। ওই দম্পতির চার বছরের একটি শিশুকন্যা রয়েছে।
ওই তরুণীর পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, বিয়ের সময়ে সোনার গয়না, মোটরবাইক, আসবাবপত্র-সহ মিলিয়ে প্রায় ছ’লক্ষ টাকার সামগ্রী দেওয়া হয়েছিল। তার পরে বিয়ের বছর খানেক পার হতে না হতেই ফের অতিরিক্ত পণের দাবি জানিয়ে টুম্পাকে মারধর করত ফিরোজ। এমনকি সাত দিন আগে কোরবানি উপলক্ষে সুরাত থেকে বাড়ি ফিরে এসে ফের একটি মোটরবাইকের দাবি জানায় ফিরোজ। তখন ‘বাবার বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে কিছু চাইতে পারবে না’ বলে টুম্পা সাফ জানিয়ে দেন। এতে স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে অশান্তি চরমে ওঠে।
টুম্পার খুড়তুতো দাদা মহম্মদ হাসিবুল হোসেন বলছেন, “অতিরিক্ত পণের দাবিতে টুম্পাকে প্রায় দিনই মারধর করত ফিরোজ। এ দিনও তাঁর শারীরিক নির্য়াতন চালিয়ে মেরে ফেলেছে। এখন কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে নিজেদের বাঁচাতে চাইছে।”
পণের দাবি অস্বীকার করে ফিরোজ বলছেন, “আমি কোন দিনই শ্বশুরবাড়িতে পণের দাবি করিনি।’’ ফিরোজ জানান, ঘটনার সময় তিনি বাড়িতেই ছিলেন না। কীটনাশক খাওয়ার খবর শুনে তড়িঘড়ি কান্দি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় টুম্পাকে। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির কিছু ক্ষণের মধ্যেই টুম্পা মারা যায়।
এ দিকে মৃত্যুর খবর পেয়ে বীরভূমের নতুনগ্রাম থেকে টুম্পার বাড়ির লোকজনেরা গাড়ি ভাড়া করে কান্দিতে চলে আসেন। সেখানেই ফিরোজ ও তাঁর পরিবারের লোকজনের মধ্যে মারপিট শুরু হয়ে যায়। হাসপাতালের রোগীর আত্মীয় ও অ্যাম্বুল্যান্সের চালকেরাও ওই মারপিট থামাতে পারেননি। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ায় স্বস্তি পান রোগীর বাড়ির লোকজন।
টুম্পার বাবা বদরুদ্দোজা শেখ বলেন, ‘‘ফিরোজ, ফিরোজের মা চিনি বেওয়া-সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ জানিয়েছি। দোষীদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করুক পুলিশ।”