পেটেন্ট পাওয়ার পরে কৃষ্ণনগরে বিক্রি বেড়ে গিয়েছে বাংলার রসগোল্লার। নিজস্ব চিত্র
রসগোল্লা তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? জিআই লাভের পরে হাত উঠছে অনেক। বাছব কাকে? প্রশ্ন সেটাই। নদিয়ার ফুলিয়া থেকে শান্তিপুর, মায় পড়শি শহর রানাঘাট— কিন্তু কোথা হইতে রস গড়াইল, তা নিয়ে কিঞ্চিৎ ঝোল টানাটানি থেকেই যাচ্ছে।
শান্তিপুরের পুরপ্রধান অজয় দে বলছেন, “ফুলিয়ায় যে রসগোল্লার জন্ম তা তো প্রমাণিত। পুরনো বই ঘাঁটুন পেয়ে যাবেন।’’ একটা রুটও বেঁধে দিচ্ছেন তিনি, ফুলিয়া থেকে শান্তিপুর হয়ে কলকাতা।
আবার পাশের জনপদ রানাঘাটের পুরপ্রধান পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘জানেন না অনেকে, তবে সকলের জানার কথা, রসগোল্লা তৈরি হয়েছিল এ শহরেই। সে তথ্য আমরা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরে পাঠিয়েছি বলেই আজ জিআইয়ের তকমা জুটল।’’ ক্ষিতীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘লুচিতরকারী’ প্রবন্ধে পাওয়া যায় রসগোল্লার উৎপত্তিস্থলের কথা। ইতিহাসটা এই রকম— ফুলিয়ার এক নামী ময়রা ছিলেন হারাধন। তিনি রানাঘাটের জমিদার পালচৌধুরীদের জন্য নানা রকম মিষ্টি তৈরি করতেন। সে বার, নিজের শিশু কন্যাকে নিয়ে গিয়েছেন রানাঘাটের জমিদার বাড়ি। সেখানে মেয়ের কান্না থামাতে ফুটন্ত রসে একদলা ছানা ফেলে তৈরি করেন সাদা গোলাকৃতি এক নরম পাকের মিষ্টি, আজকের রসগোল্লা। সেই শুরু।
আবার, বৈষ্ণবভূমি শান্তিপুরে এর জনপ্রিয়তা এমন প্রবল ছিল যে এক সময়ে লোকে মনে করত রসগোল্লার উৎপত্তি বুঝি শান্তিপুর। তবে, নদিয়ার ওই প্রাচীন শহরে চিনি কল না থাকায় এক সময়ে হারাধন ময়রার হাত ধরে রসগোল্লা পাড়ি দিয়েছিল কলকাতায়।
বাগবাজাবের কাছে কুমারটুলিতে বাড়ি কিনেছিলেন তিনি। পরের বছর তিনি দোকানও দিয়েছিলেন, সুনামও অর্জন করেন কিছু দিনের মধ্যেই। তাঁর দোকানেই শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজে ঢুকে ছিলেন আধুনিক রসগোল্লার জনক নবীনচন্দ্র দাস। ‘রসগোল্লার কলম্বাস’ও বলা হয় তাঁকে।