দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়ার পর। — নিজস্ব চিত্র
এক দুর্ঘটনায় বদলে গেল সব হিসেব। আনন্দ ঢেকে গেল বিষাদে।
উত্তরবঙ্গ বেড়াতে যাবেন বলে গাড়িতে চেপে বসেছিলেন দুই পরিবারের ছ’জন। কিন্তু রাস্তায় দুর্ঘটনা কেড়ে নিল তিন জনের জীবন। বাকিদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। রবিবার দুপুরে হলদিয়া-ফরাক্কা বাদশাহি সড়কের উপর খড়গ্রামের হাটপাড়ামোড় সংলগ্ন এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে মৃত ইনা তিওয়ারি (৩২), প্রীতি বর্মা (৩৪) ও অর্তব বর্মা (৫) বিহারের বাসিন্দা।
পুলিশ ও সেনাবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার কম্যান্ড হাসপাতালের চিকিৎসক মেজর স়ঞ্জয় বর্মা ও দিল্লির সেনা হাসপাতালের চিকিৎসক মেজর আর এন তিওয়ারি দার্জিলিং যাবেন বলে সপরিবার ছোটগাড়ি নিয়ে রওনা দেন। গাড়িতে ছিলেন স়়ঞ্জয় বর্মার স্ত্রী, ছেলে ও আর এন তিওয়ারির স্ত্রী ও মেয়ে। গাড়ি চালাচ্ছিলেন স়ঞ্জয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে একটি সেতু রয়েছে। সেতু থেকে রাস্তা খুব ঢালু হয়ে নেমে গিয়েছে। গাড়িটি খুব দ্রুত গতিতে যাচ্ছিল। তাই সেতু পেরোনোর পর হঠাৎ ঢালু রাস্তায় এসে পড়ায় চালক আর গতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। পাশের নয়ানজুলিতে গিয়ে পড়ে। সেখানে একটি গাছে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সঞ্জয়বাবুর স্ত্রী প্রীতি ভর্মা ও ছেলে অর্তব বর্মার। এ দিকে শব্দ শুনে ছুটে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা সকলকে উদ্ধার করে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন মারা যান আর এন তিওয়ারির স্ত্রী ইনা তিওয়ারি। আর এন তিওয়ারিকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
ঘটনার সময়ে উল্টোদিক থেকে মোটরবাইকে চেপে হাটপাড়া মোড়ের দিকে আসছিলেন বিনয় ঘোষ ও তাঁর এক বন্ধু। তিনি চোখের সামনে গাড়িটি উল্টে যেতে দেখেন। তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎ গাড়িটাকে নয়ানজুলিতে গড়িয়ে যেতে দেখলাম। খানিক পরে কান ফাটানো শব্দ।’’ গিয়ে দেখেন গাড়ির বাঁদিকের পিছনের দরজাটি গাছের ধাক্কায় দুমড়ে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ও তাঁর বন্ধু উদ্ধারের কাজে হাত লাগান। নিজে অল্পবিস্তর জখম হলেও স়ঞ্জয় নিজের স্ত্রী ও ছেলেকে পরীক্ষা করেন। কিন্তু ততক্ষণে দু’জনেই মারা গিয়েছেন। খবর চাউর হতে স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে আসেন। তাঁরা বাকিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। মৃতদের খড়গ্রাম হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে টহল দিচ্ছিল পুলিশের এক গাড়ি। কর্তব্যরত এক পুলিশের কথায়, ‘‘চোখের সামনে গাড়িটি ধাঁ করে বেরিয়ে যেতে দেখলাম। এত স্পিড ছিল যে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু গাড়িতে আর্মি স্টিকার লাগানো থাকায় আর আটকাইনি।’’ খবর পেয়ে আসে পুলিশের সেই গাড়িও। উদ্ধারের কাজে হাত লাগান পুলিশকর্মীরাও।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেটি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা। হঠাৎ এলাকাটি নীচু হয়ে গিয়েছে। রাস্তাটি হাল্কা বাঁকও নিয়েছে। ফলে গাড়িতে গতি থাকলে নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল হয়ে পড়ে। এর আগেও এই কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ক্ষেত্রেএ সে রকম কিছু হয়েছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঘটনার কথা জানিয়ে সেনা বিভাগের মুখপাত্র, উইং কমান্ডার এস এস বির্দি বলেন, ‘‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। হতাহতদের শীঘ্রই কলকাতায় ফিরিয়ে আনা হবে।’’