রেশন কার্ড মিলছে না, হয়রানি নদিয়ায়

নদিয়ার কৃষ্ণনগরে খাদ্য দফতরের মহকুমা অফিস। তার দরজায় নোটিস আটকানো। তাতে লেখা, ‘‘ফাঁকা রেশন কার্ড সরবরাহ না থাকার কারণে নতুন করে কোনও রেশন কার্ড আপাতত বিলিবন্টন করা যাচ্ছে না।’’ রোজ কয়েকশো মানুষ সেই নোটিস দেখে ফিরে যাচ্ছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নদিয়া শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৫ ০৩:০৯
Share:

এই সেই বিজ্ঞপ্তি।— নিজস্ব চিত্র।

নদিয়ার কৃষ্ণনগরে খাদ্য দফতরের মহকুমা অফিস। তার দরজায় নোটিস আটকানো। তাতে লেখা, ‘‘ফাঁকা রেশন কার্ড সরবরাহ না থাকার কারণে নতুন করে কোনও রেশন কার্ড আপাতত বিলিবন্টন করা যাচ্ছে না।’’ রোজ কয়েকশো মানুষ সেই নোটিস দেখে ফিরে যাচ্ছেন।

Advertisement

নদিয়ায় গত মাস ছয়েক নতুন রেশন কার্ড মিলছে না। অভিযোগ, খাদ্য দফতরের অধিকর্তার কাছে বিভিন্ন জেলার খাদ্য নিয়ামক ফাঁকা রেশন কার্ড চেয়ে আবেদন করে রেখেছেন। কিন্তু রাজ্য থেকে সেই কার্ড এখনও জেলা আসেনি। ফলে বিভিন্ন জেলায় ব্লক স্তরের খাদ্য দফতরের ইন্সপেক্টররা রেশন ডিলাদের সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, নতুন করে কোনও আবেদনপত্র গ্রহণ করা যাবে না। যারা আবেদন করে রেখেছেন, তাঁদের কার্ড পেতে দেরি হচ্ছে। অনেকে আবেদন করতেই পারছেন না।

নদিয়ার ধুবুলিয়ার বাসিন্দা মৌমিতা খাতুন বলেন, ‘‘আমার বাচ্চার বয়স ৩ বছর। ছ’মাস ধরে গ্রামের রেশন ডিলারের কাছে একাধিকবার বাচ্চার রেশন কার্ড করার জন্য গিয়েছি। কিন্তু প্রতিবারই শুনতে হয়েছে, এখন নতুন কার্ড করা সম্পূর্ণ বন্ধ।’’ নিয়ম অনুযায়ী, শিশুর বয়স ছ’মাস হলেই সে রেশন কার্ড পেতে পারে। কার্ড না পাওয়ার জন্য ভর্তুকিযুক্ত রেশনের মাল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গরিব উপভোক্তারা। মৌমিতা খাতুনের আক্ষেপ, ‘‘কার্ড হয়ে গেলে গত ছ’মাসে প্রায় ২৪ কেজি আটা কম দামে পাওয়া যেত।’’

Advertisement

নদিয়া জেলার খাদ্য নিয়ামক অসীমকুমার নন্দী বলেন, ‘‘সঙ্কট রয়েছে। কিন্তু তাই বলে আবেদনপত্র জমা নেওয়ার কাজ বন্ধ হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ অসীমবাবু জানান, তিন লক্ষ ফাঁকা রেশন কার্ড চেয়ে রাজ্য খাদ্য দফতরের কাছে আবেদন করা হয়েছে। সেই কার্ড চলে এলে সমস্যার সুরাহা হবে।

কী বলছেন কলকাতায় খাদ্য ভবনের কর্তারা? এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, মার্চ মাসেই সরস্বতী প্রেস থেকে ৬ লক্ষ কার্ড ছাপানো হয়েছে। তার মধ্যে সাড়ে পাঁচ লক্ষই চলে গিয়েছে বিভিন্ন জেলায়। অতএব নতুন কার্ড সরবরাহ করা যাচ্ছে না, এমন অভিযোগ ওঠার কথা নয়। ‘‘কেন এমন নোটিস আটকানো হয়েছে, খোঁজ নিতে হবে,’’ বলেন ওই আধিকারিক।

জেলা খাদ্য সরবরাহ দফতর সূত্রের খবর, গত বছরের শেষ দিক থেকেই সঙ্কটের শুরু। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছ‌ে যে, মাস খানেক আগে হুগলি থেকে ১৬ হাজার ফাঁকা রেশন কার্ড এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য।

এক দিকে কলকাতার প্রধান কার্যালয় দাবি করছে জেলাগুলিকে কার্ড বিলি করা হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে নদিয়ার খাদ্য দফতর বলছে, কার্ড মেলেনি। মাঝে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ লোকজন। নদিয়ার এক রেশন দোকানের মালিক সাফ জানাচ্ছেন, প্রতিদিন নতুন রেশন কার্ড করার জন্য লোকজন আসছেন। কিন্তু নতুন কার্ড না থাকায় তাঁদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন ডিলাররা।

খাদ্য দফতরের এক কর্তা অবশ্য বলছেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই রাজ্যের ৬ কোটি ১ লক্ষ মানুষের কাছে ডিজিট্যাল রেশন কার্ড পৌঁছে যাবে। উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং কোচবিহারে সে কাজের সূচনা হয়ে গিয়েছে। এখন প্রচলিত যে কাগজের রেশন কার্ড, তা কেবল কেরোসিন তোলার জন্য কাজে লাগবে। চাল-গম তুলতে ডিজিট্যাল কার্ডই লাগবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement