(বাঁ দিকে) রানাঘাট আদালতে জাকির। ধৃত ‘হাত-কাটা’ শ্যামল (ডান দিকে)। ছবি: সুদেব দাস এবং নিজস্ব চিত্র।
ডাকাতির উদ্দেশ্যে জমায়েত সন্দেহে দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করল রানাঘাট থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম জাকির হোসেন মণ্ডল ও শ্যামল রায় ওরফে ‘হাত-কাটা শ্যামল’। তাদের বাড়ি হরিণঘাটা থানা এলাকায়। শনিবার রানাঘাট আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাদের পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
ধৃতদের অন্যতম জাকির হরিণঘাটার কাষ্ঠডাঙা-২ পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য আনোয়ার হোসেন মণ্ডলের ছেলে। আনোয়ার খোলসির পঞ্চায়েত সদস্য। পুলিশের দাবি, শুক্রবার রাতে পাটুলিতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে দু’জনে ডাকাতির উদ্দেশ্যে এসেছিল। তখনই পুলিশ তাদের ধরে ফেলে। পুলিশের দাবি, তাদের কাছে লাল রঙের একটি গাড়ি ও একটি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র, দু’টি কার্তুজ ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। জাকির আগেও মাদক আইনে গ্রেফতার হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে হরিণঘাটা থানা এলাকায় হিংসা, অশান্তি, সংগঠিত অপরাধের মামলাও রয়েছে।
হরিণঘাটা তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, কাষ্ঠডাঙা-২ পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও গত ১১ অগস্ট প্রধান নির্বাচন নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছিল দল। প্রধান পদের জন্য দলের বাছাই ছিলেন শুভদীপ সাহা। কিন্তু সদস্যদের একাংশ চিন্ময় দাস নামে আর এক জনের নাম প্রস্তাব করেন। ভোটাভুটিতে দলের শুভদীপকে হারিয়ে প্রধান হন চিন্ময়। বিজেপি সদস্যেরা ভোটে যোগ দেননি।
তখনই তৃণমূলের একাংশ অভিযোগ তুলেছিল, প্রধান নির্বাচনের আগের রাতে দলের কয়েক জন নির্বাচিত সদস্যকে অপহরণ করে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ভয় দেখানো হয়। যদিও কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। শুক্রবার রাতে রানাঘাটে জাকির গ্রেফতার হওয়ার পর নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক তৃণমূল নেতা দাবি করেন, “প্রধান নির্বাচনের আগের রাতে দলের প্রতীকে জেতা চার সদস্যকে অপহরণ করে কাষ্ঠডাঙা-২ পঞ্চায়েতের এক নেতার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের ভয় দেখিয়ে শুভদীপের বিরুদ্ধে ভোট দিতে বলা হয়। এই অপহরণের পিছনে ছিল জাকির।”
জাকিরের বাবা আনোয়ার হোসেন অবশ্য ছেলের কোনও অপরাধের কথাই মানতে চাননি। পুলিশের রুজু করা মামলা প্রসঙ্গে তিনি দাবি করেন, “ওগুলো বাজে কথা। আড়ংঘাটায় দলের মিটিং ছিল, জাকির সেখানে গিয়েছিল। তার পর রাতে আকাইপুরে শ্বশুরবাড়িতে খেয়ে ফিরছিল।” প্রধান নির্বাচনের আগে অপহরণ ও হুমকির অভিযোগ উড়িয়ে তাঁর দাবি, “ওগুলোও ফালতু কথা। দল এক জনকে প্রধান করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা একটা ভাল ছেলেকে প্রধান করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে গিয়েছিলাম। কাউকে অপহরণ করা হয়নি।”
হরিণঘাটা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি নারায়ণচন্দ্র দাস ‘দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে মন্তব্য করে আর কোনও কথা বলতে চাননি।