খাগড়াঘাট স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম সংস্কার। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
আগামী সপ্তাহ থেকে মেট্রো রেল চালু হওয়ার কথা থাকলেও পূর্ব রেলের শিয়ালদা ডিভিসনের লোকাল বা যাত্রী ট্রেন কবে থেকে চলাচল শুরু হবে তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। তবু স্টেশনগুলিকে প্রস্তুত রাখার জন্য নির্দেশ আসার পরেই প্রত্যেক স্টেশন ঝাড়াই মোছাই শুরু হয়েছে। যা নিয়ে ব্যবসায়ী থেকে নিত্যযাত্রী এবং নানা পরিবারেও দেখা মিলেছে খুশির ঝলক। তাঁদের অনেকের কথায়, এতে বোঝা যাচ্ছে, ট্রেন চলবে, হয়তো ক’দিন পরে চলবে, কিন্তু সে দিন খুব দূরে নয়।
যদিও বৃহস্পতিবার রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের ডিআরএম শীলেন্দ্র প্রতাপ সিংহ বলেন, ‘‘প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালানোর বিষয় নিয়ে রেল মন্ত্রক থেকে আমাদের কাছে এখনও কোনও নির্দেশিকা আসেনি। আর পরিস্থিতির উপর নজর দিয়ে এই মুহূর্তে প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালানো সম্ভব নয়।’’
তবে মানুষের আশা কমছে না। লকডাউন পর্বে স্টেশন কেন্দ্রীক জীবনযাত্রায় বদল ঘটেছে বিস্তর। পেয়ারা বিক্রেতা থেকে চা ঝাল মুড়ির হকার এক সময় স্টেশন চত্বরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষগুলো এখন যে কে কী করছেন, তার খোঁজ নেই একে অপরের কাছে। নিত্যযাত্রীরা রাস্তা বদলে সড়ক বেছেছেন নিরুপায় হয়ে, কলকাতায় চিকিৎসা করাতে যাওয়ার জন্য যাঁরা ছিলেন রেল মুখাপেক্ষী তাঁরা বাধ্য হয়েছেন অনেক বেশি টাকা দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া করে কলকাতা পৌঁছাতে। ট্রেন চললে তা থেকে মুক্তি মিলবে।
কাশিমবাজার থেকে লালগোলা আবার ঘুরপথে বেথুয়াডহরি পর্যন্ত চা বিক্রি করতেন তন্ময় গোস্বামী। তন্ময় বলছেন, “রোজ স্টেশনে গিয়ে দেখি, কতটা কাজ হল। রেল যোগাযোগ চালু হওয়ার আশাতেই এত দিন বসে আছি।”
রেল স্টেশনগুলি সূত্রে জানা যায়, প্রত্যেক স্টেশনের বিশেষ করে মুখ্য প্রবেশদ্বার ছাড়া অন্য অলিখিত প্রবেশদ্বার কতগুলি আছে তার খোঁজ খবর নিয়ে সেগুলি কিভাবে বন্ধ করা যায় তার জন্য স্টেশন কতৃপক্ষ, আরপিএফ ও পূর্ব রেলের সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার ওয়ার্কস যৌথ উদ্যোগে তদন্ত শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। সেই তদন্তের কিছু রিপোর্ট শিয়ালদহ ডিভিসনের নির্দিষ্ট বিভাগে তা জমাও পড়েছে। ওই অলিখিত প্রবেশদ্বার বন্ধ হলে মূল প্রবেশ দ্বারের একদিকে প্লাটফর্মে যাত্রী প্রবেশ ও অন্যদিকে যাত্রী প্রস্থানের ব্যবস্থা থাকবে। যে দিকে যাত্রী প্রবেশের ব্যবস্থা থাকবে সেই দিকে থাকবে স্যানিটাইজ়ারের ব্যবস্থাও। এ সবের পাশাপাশি যাত্রী সুরক্ষার কারণে একে অপরের মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণে স্টেশন চত্বর জুড়ে সুরক্ষা বলয় আঁকার কাজ কোথাও শুরু হয়েছে, কোথাও শেষ হয়েছে। রেল সূত্রে খবর, শিয়ালদহ ডিভিশনে আপ ও ডাউন মিলিয়ে মোট ৯২০টি প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলে। প্রতিটি ট্রেন থেকে স্টেশনে শ'য়ে শ'য়ে প্যাসেঞ্জার নামে।
বহরমপুর-পলাশী রুটের নিত্যযাত্রী পলাশ দাস বলেন, “স্টেশনে না হয় সুরক্ষা বলয় থাকল কিন্তু ট্রেনের মধ্যে সেই সুরক্ষা বজায় থাকবে তো বিশেষ করে শিয়ালদা লালগোলা শাখায়।” সে কথা স্বীকার করে ডিআরএম বলেন, “রেলের কাছে এই মুহূর্তে অত কর্মীও নেই যারা ট্রেনের মধ্যে সামাজিক দূরত্বের দিকে নজর রাখবে।”