বিজেপির সভার পাশে আটকে পড়া সেই অ্যাম্বুল্যান্স। ফাইল চিত্র
অ্যাম্বুল্যান্স আটকে বিজেপির মুখ পড়েছে ঠিকই। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।
কৃষ্ণনগরের বাসিন্দাদের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, যেখানে রাস্তা জুড়ে একটা রাজনৈতিক দল সভা করছে, সব জেনেও কেন পুলিশ কেন সেই রাস্তায় অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে দিলেন? কেন জাতীয় সড়ক থেকে শহরে ঢোকার মুখেই সেটিকে আটকে অন্য পথে যেতে বললেন না? শুধু সেটাই নয়। অ্যাম্বুল্যান্স যখন সভাস্থলের কাছে এসে গেল, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা কেন ভিড় সরিয়ে রাস্তা করে দিলেন না?
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে সভাটি চলছিল জেলা প্রশাসনিক ভবনের সামনে। আর, প্রসূতিকে নিয়ে ধুবুলিয়া থেকে আসছিল অ্যাম্বুল্যান্স। সে দিন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে পিডব্লিউডি মোড় দিয়ে কৃষ্ণনগর শহরে ঢুকেছে অ্যাম্বুল্যান্সটি। সেই পথে না এসে পাশের হেমন্ত হিমঘর মোড় দিয়ে ঢুকে বনশ্রী পাড়ার ভিতর দিয়ে অনায়াসে সেটি জেলা সদর হাসপাতালে চলে যেতে পারত। তাতে খুব বেশি হলে দুই থেকে তিন মিনিট সময় বেশি লাগত।
প্রশ্ন হল, পিডব্লিউডি মোড়ে থাকা ট্রাফিক পুলিশ সভার কথা জেনেও কেন ওই রাস্তা দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স যেতে দিল? নিজেদের অস্বস্তি চাপা দিতে এই প্রশ্নটা সামনে আনছেন বিজেপি নেতারাও। ঘটনার দিনই দিলীপ চক্রান্তের তত্ত্ব দিয়েছিলেন। বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আশুতোষ পালও এখন বলছেন, “দু’ঘন্টা ধরে মিটিং চলছিল। এত লোক বসে আছে রাস্তায়। তা জেনেও পুলিশ এই পথেই অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকিয়েছে। এটা আসলে চক্রান্ত।”
বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার জাফর আজমল কিদোয়াই অবশ্য বলেন, “অ্যাম্বুল্যান্সে গুরুতর অসুস্থ রোগী ছিল বলেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।” পুলিশকর্তাদের দাবি, সভা উপস্থিত বিজেপি কর্মীরা যে অ্যাম্বুল্যান্স দেখেও পথ ছাড়বেন না, এটা তাঁরা ভাবতে পারেননি। কেননা মিটিং-মিছিল-বন্ধেও কোনও দল সাধারণত অ্যাম্বুল্যান্সের রাস্তা আটকায় না।
তার পরেও অবশ্য প্রশ্ন থাকছে। সেটা হল, অ্যাম্বুল্যান্স যখন ওই পথে ঢুকেই গিয়েছে এবং সভাস্থলের কাছে চলে এসেছে, সভার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা কেন ভিড় সরিয়ে রাস্তা করে দিল না? বিশেষ করে, মঞ্চের ডান দিকে যেখানে অ্যাম্বুল্যান্স আটকে যায়, সেখানেই বেশ কিছু পুলিশকর্মী দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁরা কী করছিলেন?
পুলিশ সুপারের দাবি, “পুলিশ ঠিকই রাস্তা করে দিচ্ছিল। কিন্তু ভিড় থাকায় অ্যাম্বুল্যান্সের লোকেরাই ফিরে চলে এসেছিলেন।” পুলিশ সুপারের এই ব্যাখ্যা অবশ্য মানতে রাজি নন প্রসূতির পরিবার। পাপিয়া বিবির মা সাহিনুর মিস্ত্রির কথায়, “পুলিশ বারণ করলে আমরা কোনও দিন ওই রাস্তায় ঢুকতাম না। পুলিশের সাহায্য পেলে ফিরেও আসতাম না।”