প্রতীকী ছবি
সরকারি প্রকল্পের অনুদান পেতে হলে কাটমানি আবশ্যক! তৃণমূলে নেতা-কর্মীদের একাংশ, রেওয়াজটা প্রায় নিয়মে বলবৎ করে ফেলেছিলেন। অভিযোগের পাহাড় জমতে থাকায় আসরে নামতে হয়েছিল সেই দলনেত্রীকেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কাটমানি নেওয়ার সেই রেওয়াজ ফিরিয়ে দেওয়ারও হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। সেই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের মোবাইল ও হোয়টস্অ্যাপ নম্বর পোস্ট করে জনগণের কাছে কাটমানি ইস্যুতে অভিযোগ চাইলেন তৃণমূলের লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গির মিঞা।
শুধু দল বা সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধেই নয়, অভিযোগ যদি তাঁর বিরুদ্ধেও থাকে, তা যেন সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখে দেওয়া হয়— স্বচ্ছ থাকতে এমনই দাবি করলেন তিনি।
কাটমানি নিলে তা ফেরত দেওয়ার কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন দলনেত্রী। এমনকি সতর্ক বার্তা পাঠিয়েছিলেন প্রশাসনের কাছেও— দল দেখে নয়, আভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিন। নির্দেশ পেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাটমানি রুখতে মাইকে অনর্গল ঘোষণার পাশাপাশি লিফলেট বিলি, পাড়ায় পাড়ায় দলীয় নেতাদের সমাবেশ, বাদ যায়নি কিছুই। এমনকি সম্প্রতি বাংলা আবাস যোজনায় কাটমানির দৌরাত্ম্য রুখতে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে টোল-ফ্রি নম্বর চালু করা হয়েছে। এ বার সোশ্যাল মিডিয়ায় দলেরই এক নেতার এমন পোস্ট অস্বস্তি বাড়াল।
লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বলেন, ‘‘লোকমুখে কাটমানি নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। তাই মুখে না বলে অভিযোগ জানানোর আহ্বান জানিয়েছি। অভিযোগ পেলে আমরাই পুলিশ প্রশাসনকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলব।’’
তবে জেলা কংগ্রেস জাহাঙ্গিরের এই পোস্টকে বিধানসভা ভোটের প্রচার বলে মনে করছে। জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘শাসকদলের দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে কোনও সুরাহা পাওয়া যায় না। আজ পর্যন্ত কোনও অভিযোগের ব্যবস্থা হয়নি। বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগনের সামনে নিজেদের সাধু হিসেবে দেখাতে এই ধরনের পোস্ট, এর বেশি কিছু নয়।’’
লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাঁর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে বলেছেন, ‘‘লালগোলায় কোনও কাজের জন্য কোনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যে কোনও দফতরের সরকারি আধিকারিক যদি আপনাদের কাছে থেকে টাকা চায়, মন খুলে জানান, আমার সঙ্গেও কথা বলতে পারেন। পরিচয় গোপন রেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন— ‘‘আমার নাম ভাঙিয়ে কেউ সুবিধা নিলে আমাকে হোয়াটসঅ্যাপ করুন। আমি যদি কারও কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে থাকি প্রকাশ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেটা লিখতে পারেন।’’
তবে ওই পোস্টের পাশাপাশি তৃণমূল পরিচালিত লালগোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অজয় ঘোষ সোশ্যাল মিডিয়াতে লিখে বসেছেন, ‘‘ঘর পেতে টাকা দেওয়ার অভিযোগ করায় মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে এমন কিছু থাকলে বলবেন। আমরা অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।’’
সূত্রের খবর, গত প্রায় এক মাসে জেলা পরিষদের টোল-ফ্রি নম্বরে বাংলা আবাস যোজনায় দুর্নীতির বিষয়ে প্রায় ১০০টি অভিযোগ এসেছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘‘সব অভিযোগের তদন্ত করতে ব্লক স্তরে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’