মুর্শিদাবাদের সালার থেকে আজিমগঞ্জ পর্যন্ত বিভিন্ন রেল স্টেশন পরিদর্শনে পাবলিক অ্যাকাউন্ট কমিটির চেয়ারম্যান অধীর চৌধুরী ও রেলের পশ্চিম শাখার ডিআরএম। খাগড়াঘাট রোড স্টেশনে তোলা ছবি। ছবি গৌতম প্রামাণিক
কেউ চাইছেন রেল লাইনের তলা দিয়ে যাতয়াত করার রাস্তা (আন্ডারপাশ), কেউ চাইছেন এক প্লাটফর্ম থেকে অন্য প্লাটফর্মে যাওয়ার জন্য চলমান সিঁড়ি (এসকেলেটর), কেউ চাইছেন এক্সপ্রেস ট্রেন বাড়ানো হোক বা স্টপেজ দেওয়া হোক।
সেই সঙ্গে সকলেই ট্রেন ভাড়া কমিয়ে স্বাভাবিক করার দাবি তুললেন। তাঁদের অভিযোগ, এই শাখায় করোনার সময় বিশেষ ট্রেন চালানোর নাম করে ১০ টাকার টিকিটের দাম ৩০ টাকা করা হয়েছিল। করোনা চলে গেলেও টিকিটের দাম স্বাভাবিক হয়নি।
বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের সালার থেকে আজিমগঞ্জ পর্যন্ত ৮টি স্টেশন পরিদর্শন করেছেন পাবলিক অ্যাকাউন্ট কমিটির চেয়ারম্যান তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে রেলের হাওড়ার ডিআরএম সঞ্জীবকুমার-সহ অন্য আধিকারিকেরা ছিলেন। তাঁদের কাছে পেয়ে ওই সব স্টেশনে যাত্রীদের পাশাপাশি স্থানীয়রা জড়ো হয়ে তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তাঁদের দাবি দাওয়া নিয়ে অধীর চৌধুরী রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে কথাও বলেন।
অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘এর আগে আমরা যেমন রেজিনগর থেকে লালগোলা পরিদর্শন করেছিলাম। এদিন সালার থেকে আজিমগঞ্জ পর্যন্ত বিভিন্ন স্টেশন পরিদর্শন করেছি। মানুষ তাঁদের সমস্যার কথা বলেছেন। রেল তাঁদের মতো করে কাজ করবে। তার পিছনে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি এবিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকবে।’’ এক প্রশ্নের উত্তরে অধীর জানান, ‘‘নশিপুর রেলসেতু নিয়ে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে লড়াই করছি। এত দেরি হওয়া উচিত হয়নি। আমার ধারণা, ফেব্রুয়ারি-মার্চে রেলসেতু চালু হবে।’’
বৃহস্পতিবার বহরমপুরের খাগড়াঘাট রোড স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেন ধরে অধীর চৌধুরী সালার স্টেশনে পৌঁছন। খাগড়া স্টেশনে ট্রেন ধরতে এলে অধীরকে ঘিরে এলাকার লোকজন তাঁদের সমস্যার কথা শোনান। পরে সালার স্টেশনে পৌঁছলে সেখানে রেলের আধিকারিকদের নিয়ে সালারের লোকজনের সঙ্গে অধীর কথা বলেন। সালারের লোকজন তাঁদের সমস্যার কথা তাঁদের সামনে তুলে ধরেন। সেখান থেকে তাঁরা টেঁয়া স্টেশনে পৌঁছলে স্থানীয়রা জানান, রেলেগেট, আন্ডারপাশ কিছু না থাকায় এলাকার লোকজনকে রেললাইনের উপর দিয়ে যাতয়াত করতে হয়। সে জন্য তাঁরা সেখানে একটি আন্ডারপাশ তৈরির দাবি জানান। সেখানেই ভিড়ের মাঝে থেকে একজন ‘গো ব্যাক’ বলে চিৎকার করে উঠতেই অধীর বলেন কে ‘গো ব্যাক’ বলল। তার পরে আর কাউকে উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়নি।
বাজারসৌ স্টেশনে তাঁরা পৌঁছতেই এলাকার লোকজন জানান, এখানে এক্সপ্রেস ট্রেন দাঁড় করানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ব্যান্ডেল স্টেশনে ৪০ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখে। সেখানে যাতে এভাবে ট্রেন দাঁড় না করিয়ে রাখে সেই দাবি জানান। সেই সঙ্গে তাঁরা জানান, আগে এখানে হাটেবাজারে এক্সপ্রেস দাঁড়াত। কিন্তু এখন হাটেবাজারে ডাউন দাঁড়ালেও আপে দাঁড়ায় না। সেই সঙ্গে কামরূপ ও রাধিকাপুর এক্সপ্রেস যাতে সেখানে দাঁড়ায় সে ব্যবস্থার দাবি তাঁরা জানান। চৌরিগাছা স্টেশনে র্যাম্প তৈরির পাশাপাশি বিশ্রামাগার তৈরির দাবি জানিয়েছেন নিত্যযাত্রীরা। কর্ণসুবর্ণ স্টেশনেও র্যাম্প তৈরির দাবি উঠেছে। খাগড়াঘাট রোড স্টেশনে র্যাম্প এবং চলমান সিঁড়ি তৈরির দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে খাগড়াঘাট রোড স্টেশন থেকে মালদহ ও হাওড়াগামী ট্রেন বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছে। লালবাগ কোর্ট রোড স্টেশনে এক্সপ্রেস ট্রেন দাঁড় করানোরসহ একাধিক দাবি জানানো হয়েছে।
হাওড়ার ডিআরএম সঞ্জীবকুমার বলেন, ‘‘পিএসি-র চেয়ারম্যানের সঙ্গে রেলের বিভিন্ন স্টেশন আমরা ঘুরে দেখেছি। স্থানীয়রা তাঁদের সমস্যার কথা বলেছেন। রেল কী কী করছে তা আমরা জানিয়েছি। যতটা করা সম্ভব আমরা তা করার আশ্বাস দিয়েছি।’’