দু’টো টিমের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিল বিদেশরাই— বলছিলেন হেরে যাওয়া দলের কোচ।
কলকাতা লিগের কোনও ম্যাচের ফলাফলের কাটা ছেঁড়া নয়, খেলা ছিল দু’টি জেলের বন্দিদের মধ্যে। বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের সঙ্গে দমদম জেলের। দমদম জেলেই একগাদা বিদেশি ফুটবলার। তাঁরা সবাই বাংলাদেশি। বহরমপুরের টিমে সবাই এ-পার বাংলার। পার্থক্য হয়ে গেল এখানেই। এ বারে জেলবন্দিদের ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ৩-১ গোলে বহরমপুরকে হারায় দমদম।
তবে বন্দিদের নিয়ে তৃতীয় বছরে পড়া ফুটবল টুর্নামেন্টের নিয়মও অনেকটা কলকাতা লিগের মতোই। দলে একসঙ্গে চার জন বিদেশি বন্দিকে নেওয়া যাবে। কিন্তু খেলতে পারবেন দু’জন। জেলের কর্তাদের কথায়, এখানেই পার্থক্য গড়ে দেবে প্রেসিডেন্সি জেল। কারণ, ওই দলে দু’জন বড় চেহারার নাইজেরিয়ান ফুটবলার রয়েছে।
২০০৫ সালে এ রাজ্যের জেলগুলিতে সংশোধনের প্রক্রিয়া হিসেবে বন্দিদের মধ্যে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়। তারই অঙ্গ হিসেবে মাঝেমধ্যে বন্দিদের মধ্যে ফুটবল খেলারও চল ছিল। ২০১৩ সাল থেকে বন্দিদের নিয়ে ফুটবল টুর্নামেন্টও শুরু করে রাজ্য কারা দফতর। প্রথম বছরে টুর্নামেন্ট হয়েছিল লাটবাগানের মাঠে। গত বছর টুর্নামেন্ট শুরু হয় দমদমের সুভাষনগর স্টেডিয়ামে। ফাইনাল হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল মাঠে। এ বারের ‘বিবেক কাপ’ ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। কারা দফতর সূত্রের খবর, ছ’টি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার— দমদম, প্রেসিডেন্সি, আলিপুর, মেদিনীপুর, জলপাইগুড়ি এবং বহরমপুরকে নিয়ে তৈরি হয়েছে ছ’টি দল। দু’টি গ্রুপে ছ’টি দলকে ভাগ করা হয়েছে। লিগের মাধ্যমে খেলে প্রতি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন টিম দু’টি ফাইনাল খেলবে। ফাইনাল হওয়ার কথা কলকাতা ময়দানে মহমেডান স্পোর্টিং কিংবা মোহনবাগান মাঠে।
এ রাজ্যে বন্দিদের নিয়ে গড়া ফুটবল টিমের কোচ মিহির দাস বলেন, ‘‘ছ’টি টিমের মোট ফুটবলারের সংখ্যা ৯৬। ১৬ জন নিয়ে প্রতিটি টিম গড়া হয়েছে। ৯৬ জনের মধ্যে ৩১ জন বিদেশি। ৩১ জনের মধ্যে ৬ জন নাইজেরিয়ন। বাকি ২৫ জন বাংলাদেশি।’’ মিহিরবাবু জানান, গ্রুপ লিগের খেলা শেষ হবে আগামী ২৯ অগস্ট। এর পরে ফাইনাল হবে ১৩ সেপ্টেম্বর। মিহিরবাবু জানান, গ্রুপ লিগের খেলা অবশ্য জেলের চার দেওয়ালের গণ্ডীর মধ্যেই হচ্ছে। তবে ফাইনাল হবে প্রকাশ্যে। সেখানে বন্দিদের আত্মীয়স্বজন ছাড়াও থাকতে পারবেন সাধারণ দর্শকও। তা ছাড়া বহরমপুরে জেলের বাইরে প্রকাশ্যে এফইউসি মাঠেও একটি ম্যাচ খেলবেন বন্দিরা। সেখানে একটি প্রীতি ম্যাচে এখানকার সাংবাদিক একাদশের সঙ্গে বন্দিদের দলের খেলা হবে। ওই খেলা হবে আগামী সোমবার, ৩১ অগস্ট।
এ দিন টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করে কারা-কর্তা কল্যাণকুমার প্রামাণিক বলেন, ‘‘সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মতোই ফুটবল খেলা শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতির সংশোধন করে। বন্দিদের সমাজের মূলস্রোতে আসতে সাহায্য করে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা এটাকে ‘খেল থেরাপি’ বলছি। নাটক, গান, অঙ্কন, নৃত্য যেমন কালচারাল থেরাপি, তেমনই ফুটবলটাও খেল থেরাপি। এই খেলার মাধ্যমে বন্দিদের মানসিকতার সংশোধন ঘটবে।’’